রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)- এর দাবি, মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা অন্তত ৭৫ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে অর্থ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরি পেলেও, অনেকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদ পাননি। যে প্রার্থীরা চাকরি পাননি, তাঁদের অনেকেই পরে টাকা ফেরতের দাবি তোলেন এমনটাই উঠে এসেছে ইডির জেরায়।
আরও পড়ুন: মোবাইল ছোঁড়ার অভিযোগ খারিজ, পড়ে গিয়েছিলেন, দাবি ধৃত বিধায়ক জীবনের
শনিবার রাতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) যে ১৮০৬ জন ‘দাগী’ প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে, সেই তালিকার মধ্যেই জীবনকৃষ্ণের কাছ থেকে টাকা দিয়ে নিয়োগ পাওয়া একাধিক প্রার্থীর নাম রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। ইডির দাবি, প্রার্থীদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন অঙ্কে টাকা তুলেছিলেন জীবনকৃষ্ণ। কখনও পাঁচ লক্ষ, কখনও সাত, আবার কখনও ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এমনকি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁর মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে বলে ইডি তদন্তে উঠে এসেছে। সেই নিয়োগে নাকি ভুয়ো নথি ব্যবহার করা হয়েছিল।
ইডি কর্তাদের বক্তব্য, এই অর্থ লেনদেনের নথি কলকাতার বিচারভবনের বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে, বাকি প্রত্যাশীদেরও একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, বিপুল টাকার লেনদেন আড়াল করতে জীবনকৃষ্ণ সাহা নিজের স্ত্রীর অনামী গ্রামীণ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিলেন। অভিযোগ, এক কোটি ২০ লক্ষ টাকারও বেশি এই পথে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। টাকার লেনদেন হয়েছিল মিডলম্যান, এজেন্ট এবং কিছু প্রাইভেট ব্যক্তির মাধ্যমে। ইডির দাবি, সেই টাকায় বিভিন্ন সময়ে সম্পত্তি কেনা হয়েছে জীবনকৃষ্ণ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নামে।
এই মামলায় প্রসন্ন রায়ের মতো কয়েকজন মধ্যস্থতাকারীর নামও উঠে এসেছে বলে ইডি জানাচ্ছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, টাকার বিনিময়ে চাকরি না হওয়ায় জীবনকৃষ্ণের কাছ থেকে ফেরত চাইতে আসা প্রার্থীদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। তবে সত্যতা এখনও স্বতন্ত্রভাবে যাচাই হয়নি।
এদিকে, জেরা চলাকালীন জীবনকৃষ্ণ সাহা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, যেই টাকার কথা বলা হচ্ছে, সেটি তিনি জমি কেনার জন্য ব্যবহার করছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, টাকা এসেছে তাঁর বাবা বিশ্বনাথ সাহার দেওয়া উপহার হিসেবে। তবে ইডির দাবি, বিশ্বনাথ সাহা নিজেই সেই বক্তব্য মানতে নারাজ। জীবনকৃষ্ণের স্ত্রী টগর সাহা এবং পিসি মায়া সাহার বয়ানও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।