নন্দীগ্রামে দু’হাজার কোটি টাকার জাহাজ মেরামতির কারখানা করছে কেন্দ্রীয় সরকার বলে দাবি করলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এটা তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র। সেখানেই রামনবমীর দিনে নন্দীগ্রাম এলাকায় রামমন্দির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এসে এমন কথা বলেছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। অথচ সেই বক্তব্যকে এবার সরাসরি খারিজ করে দিল হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই বিপাকে পড়লেন বিরোধী দলনেতা। এই সুযোগে তৃণমূল কংগ্রেস জোর খোঁচা দিল বিরোধী দলনেতাকে। যা নিয়ে এখন সরগরম রাজ্য–রাজনীতি।
বিরোধী দলনেতার কথা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার এখানে জাহাজ মেরামতের কারখানা গড়ে তুলবে। সেখানে দু’হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। আর কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় কারখানা গড়ার দাবি কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জাহাজ মেরামতির কারখানা গড়তে বন্দর কোনও বিনিয়োগ করছে না। বন্দরের পক্ষ থেকে জমি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাকে। ভাড়ার টাকা থেকে আয় হবে বন্দরের। শিল্প গড়বে বেসরকারি সংস্থা।’ হলদিয়া বিধানসভা আসনের বিধায়ক তাপসী মণ্ডল সদ্য বিজেপি সংস্রব ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তাতে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তাই এমন কথা বলেছেন বলে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি।
আরও পড়ুন: ‘আরজি কর থেকে শিক্ষক নিয়োগ এরাই ঘেঁটেছে’, দিলীপের আক্রমণ সিপিএমের বিরুদ্ধে
শুভেন্দু অধিকারীর করা দাবি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তহে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আগামী দিনে হলদিয়া বন্দরকে ঘিরে আরও কর্মসংস্থান বাড়বে। আর শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘নন্দীগ্রামে ভারত সরকার দু’টো কাজ করেছে। জেলিংহামে দু’টি কারখানা তৈরি হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য দু’হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করেছে।’ আর বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সামনে আসতেই নন্দীগ্রাম–১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, ‘শুধুই মিথ্যে কথা দিয়ে রাজনীতি করতে চায় বিরোধী দলনেতা। বেসরকারি সংস্থা জাহাজ মেরামতির করার জন্য লিজ নিয়েছে। আর উনি এটাকে নির্বাচনের প্রাক্কালে গিমিক করে ফেললেন।’
স্থানীয় সূত্রে খবর, গাংড়াচরে নতুন একটি মাটির রাস্তা তৈরি হয়েছে। গেটও সেখানে লাগানো হয়েছে। বরাবরই সবাই শুনে আসছেন এখানে কারখানা হবে। ভোট এলে এই সব তৎপরতা বাড়ে। ফলাফল প্রকাশের পর যে তিমিরে ছিল সবাই আবার সেই তিমিরে। এই জেলিংহামে বহুবার কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জমির মাপা হয়েছে। এখন রাস্তার কাজ হচ্ছে। ১৯৭৮ সালে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানাকে জেলিংহামে কারখানা করতে জমি দেয়। ১৯৯৪ সালে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জেলিংহামে কোচ কারখানা করার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু হয়নি। ২০২৫ সালে হলদিয়া বন্দর এক বেসরকারি সংস্থাকে জেলিংহামে বার্জ মেরামতি করার জন্য ৩০ বছরের চুক্তিতে জমি লিজ দেয়। তারা রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা করবে। আর বার্জ, জাহাজ মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবে। ছোট জাহাজ তৈরির কারখানা জেলিংহামে হতে পারে।