কাটোয়া মহকুমায় ফের জাল নথি চক্র ঘিরে চাঞ্চল্য। কেতুগ্রামের এক বৃদ্ধ নিজের বাংলাদেশি জামাই ও নাতিকে ছেলে পরিচয়ে ভারতের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ আনল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বিষয়টি সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: কালীঘাটে ধৃত বাংলাদেশি কীভাবে পেলেন ‘খাঁটি ভারতীয়’ ড্রাইভিং লাইসেন্স?
কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ বিষয়টি সামনে আনেন। তাঁর দাবি, সীতাহাটি পঞ্চায়েত এলাকার ওই বাসিন্দা বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে এসেছিলেন এবং এখানে এসে নিজের আধার কার্ড বানিয়ে ফেলেন। এরপর তাঁর জামাই ও নাতিকে ‘নিজের ছেলে’ হিসেবে দেখিয়ে নথিভুক্ত করিয়েছেন। ভোটার তালিকায় তাদের নাম তোলা হয়েছে বলেও দাবি বিধায়কের। তবে এখানেই শেষ নয়। স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ, কাটোয়ায় এমন একটি সংগঠিত চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে যারা অর্থের বিনিময়ে জাল নথি তৈরি করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা আত্মীয়ের বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর সেই ঠিকানাকেই স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে দেখিয়ে প্রমাণপত্র সংগ্রহ করছে। ধাপে ধাপে তৈরি হচ্ছে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, এমনকি আধারও।
কাটোয়ার পানুহাট অঞ্চলে এরকম ছ’জন বাংলাদেশি নাগরিকের হদিস মেলেনি বলে জানান কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, প্রথমে তারা মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঢুকে নথি বানায়। পরে সেগুলি বদলে কাটোয়া এলাকায় নিজেদের স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে থাকছে। জেলার গোয়েন্দা শাখাও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক। পূর্ব বর্ধমান জেলার ডিএসপি (ডিআইবি) বীরেন্দ্রকুমার পাঠক জানান, ২০২৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১১টি এফআইআর দায়ের হয়েছে জাল নথি তৈরির ঘটনায়। এর মধ্যে অন্তত ২১টি ভুয়ো জন্ম শংসাপত্র সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কাটোয়া এলাকায় এর আগে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় ভুয়ো ভোটার ও আধার কার্ড ব্যবহার করে জমি দখলের অভিযোগে চক্রের দুই সদস্যকে গাজিপুর থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের না হলেও কেতুগ্রামের বিধায়ক জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানানো হবে। জামাই-নাতিকে ছেলে বানিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলানোর ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করল কাটোয়ার জাল নথি চক্রের ঘটনায়। এর পেছনে রাজনৈতিক মদত ও প্রশাসনিক গাফিলতি কতটা দায়ী, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।