পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি অঞ্চলে ঘটেছে রোমহর্ষক তিনটি খুন। এবার মা, মেয়ে ও নাবালিকা মাসিকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল তিনজনকে। বুধবার পুরুলিয়া পুলিশ লাইনসে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে খড়্গপুরের এসআরপি দেবশ্রী সান্যাল এবং পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এই তথ্য জানান। তাঁদের দাবি, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কজনিত দ্বন্দ্ব থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
আরও পড়ুন: প্রেম থেকে শত্রুতা, পরে ৩খুন! বাঘমুণ্ডির ট্রিপল মার্ডার কেসে উন্মোচন হচ্ছে রহস্য
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার ভোরে। সুইসা স্টেশনের কাছের রেললাইনে উদ্ধার হয় তিনজনের দেহ কাজল মাছোয়াড়, তাঁর সাত বছরের মেয়ে এবং নাবালিকা বোন। প্রথমে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে দেখানোর চেষ্টা হলেও, মৃতদেহের মাথায় গভীর আঘাত এবং গলায় দাগ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এটি পরিকল্পিত খুন। এরপরই পুরুলিয়া জিআরপি থানায় খুন ও প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু হয়। ময়নাতদন্তের পুরো প্রক্রিয়াই ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়। তদন্তে নেমে মঙ্গলবার গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয় বাবুজান মোমিন, বিজয় মাছোয়াড় এবং আরও একজনকে। পুলিশ সূত্রে খবর, বাবুজানের সঙ্গে কাজলের দীর্ঘদিনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। অন্যদিকে, বিজয়ের সঙ্গে নাবালিকা বোনের সম্পর্কের বিষয়েও প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। এসব নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল, যা শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী রূপ নেয়।
পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ধৃতদের জেরা করে জানাতে পারা যায়, রেললাইন সংলগ্ন একটি স্থানে তিনজনকে খুন করার পর ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখাতে দেহগুলো রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়। ধৃতদের কাছ থেকে একাধিক তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, যা প্রাথমিক তদন্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জানা গিয়েছে, বাবুজানের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে হলেও বীরগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাঁর একটি থাকার জায়গা আছে। বাঘমুণ্ডি থানার এলাকায় তাঁর একটি ইটভাটা রয়েছে, যেখানে কাজল প্রায় পাঁচ বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও সেই ইটভাটায় যুক্ত ছিলেন। বিজয়ও একই ইটভাটায় কাজ করতেন।
এখনও পর্যন্ত পুলিশের হাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা এবং প্রতিশোধ। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আরও জেরা চলছে। তদন্তকারীদের আশা, পরবর্তী সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে, যা এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পুরো চিত্র স্পষ্ট করবে।