সম্প্রতি আমেরিকায় ধরা পড়েছে খলিস্তানি জঙ্গি হ্যাপি পসিয়া। অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অভিযোগে হরপ্রীত সিং ওরফে হ্যাপিকে গ্রেফতার করেছিল ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। এই হ্যাপি বেশ কিছু জঙ্গি হামলায় অভিযুক্ত ভারতে। এই আবহে এবার উত্তরপ্রদেশ পুলিশ দাবি করল, ধৃত খলিস্তানি জঙ্গি নেতা মহাকুম্ভেও হামলার ছক কষেছিল। শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (এডিজি)-আইনশৃঙ্খলা অমিতাভ যশ। (আরও পড়ুন: দেশে 'ধর্মীয় যুদ্ধের' জন্য দায়ী সুপ্রিম কোর্ট? সাংসদের মন্তব্য নিয়ে কী বলল BJP)
এই বিষয়ে অমিতাভ যশ জানিয়েছেন, ৬ মার্চ কৌশাম্বি থেকে ইউপি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গ্রেফতার করেছিল বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনালের সন্ত্রাসী লাজার মাসিহকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হ্যাপির নাম উঠে এসেছিল। এই মাসিহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল হ্যাপি। পুলিশ আধিকারিক বলেন, এসটিএফ তদন্তে উঠে এসেছে যে বিকেআইয়ের জার্মানি ভিত্তিক মডিউল হামলার পরিকল্পনা করেছিল, যার নেতৃত্বে রয়েছে স্বরণ সিং ওরফে জীবন ফৌজি, পাকিস্তানে হরবিন্দর সিং এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হরপ্রীত সিং। বর্তমানে কুম্ভমেলায় হামলার ষড়যন্ত্রে হ্যাপি পাসিয়ার ভূমিকা এবং আইএসআই ও বিকেআইয়ের সাথে তার যোগাযোগের তদন্ত করছে ইউপিএসটিএফ। এদিকে পঞ্জাব পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজিপি) এই গ্রেফতারিকে আইএসআই সমর্থিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অভিযানের একটি বড় সাফল্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টো থেকে গ্রেফতার হয়েছে খলিস্তানি জঙ্গি হরপ্রীত সিং ওরফে হ্যাপি পাসিয়া। তার সম্পর্কে এফবিআই জানিয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এবং খালিস্তানি জঙ্গি সংগঠন বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনালের (বিকেআই) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিল হরপ্রীত সিং। হরপ্রীত সিং অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করেছিল। এফবিআই এবং ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড রিমুভাল অপারেশনস (ইআরও) ইউনিট যৌথভাবে তাকে গ্রেফতার করে। এফবিআই জানিয়েছে, হরপ্রীত সিং দীর্ঘদিন ধরে বার্নার ফোন এবং এনক্রিপ্টেড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজের পরিচয় গোপন করছিল।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত দু'বছরে পঞ্জাবে ১৪টি গ্রেনেড হামলা, একটি আইইডি বিস্ফোরণ এবং একটি আরপিজি (রকেট চালিত গ্রেনেড) হামলা সহ অন্তত ১৬টি সন্ত্রাসবাদী ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল হরপ্রীত সিং। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে অমৃতসরের গুমতলা পুলিশ ফাঁড়ির কাছে কার্বুরেটর-ভিত্তিক আইইডি ব্যবহার করে এক সিনিয়র পুলিশ অফিসারের গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল এই হ্যাপি। তার আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চণ্ডীগড়ের সেক্টর ১০-এ এক অবসরপ্রাপ্ত পঞ্জাব পুলিশ অফিসারকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলাতেও নাম উঠে আসে হ্যাপির। এই মামলায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) হ্যাপিকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
হরপ্রীত সিংয়ের অপরাধমূলক কর্মজীবন জগ্গু ভগবানপুরিয়া গ্যাং দিয়ে শুরু হয়েছিল, তবে পরে তিনি পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী হরবিন্দর সিং সান্ধু ওরফে রিন্ডার সঙ্গে হাত মেলায়। এই সময়ে, বব্বর খালসা একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেটর হিসাবে বিবেচিত হয়। তারা একসাথে পঞ্জাবে মদ মাফিয়া, ব্যবসায়ী এবং হিন্দু নেতাদের নিশানা করে চাঁদাবাজির একটি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছিল। নেটওয়ার্কটি অগ্নিসংযোগ, গুলি এবং ভয় দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করত। পঞ্জাব পুলিশের রিপোর্টে হরপ্রীতের মার্কিন সহযোগী গুরদেব সিং জয়জল পেহলওয়ান এবং গুরপ্রীত সিং ওরফে গোপী নওয়ানশাহরিয়া এবং জার্মানির স্বরণ সিং ওরফে জীবন ফৌজীর নামও রয়েছে। হরপ্রীত সিংয়ের গ্রেফতারির পর তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। পঞ্জাব পুলিশ এবং এনআইএ প্রয়োজনীয় নথি মার্কিন সংস্থাগুলির কাছে পাঠিয়েছে। ভারত সরকার আশা করছে যে তাকে শীঘ্রই ভারতে প্রত্যর্পণ করা সম্ভব হবে।