নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুরু হল বিচারপ্রক্রিয়া। শুক্রবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে শুরু হল শুনানি। আদালতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কালো সানগ্লাস চোখে, হাসপাতালের শয্যা থেকেই তিনি অংশ নিলেন শুনানিতে। এদিন একইভাবে ভার্চুয়াল উপস্থিত ছিলেন অশোক সাহা, এসপি সিংহ এবং প্রসন্ন রায়।
আরও পড়ুন: নিয়োগ মামলায় স্বস্তি পার্থর, আরও একটি মামলায় পেলেন জামিন, জেলমুক্তি কি হবে?
প্রথম দিনেই আদালতে হাজির হন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান। তাঁকে জেরা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে এলেন? জবাবে তিনি জানান, তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সভাপতি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবেই তাঁর পরিচয় ছিল। ২০১১ সালের ৬ জুন রাজ্যপালের অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন। সিবিআই জানতে চায়, কার নির্দেশে তিনি এই পদে এসেছিলেন? প্রাক্তন চেয়ারম্যানের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং তাঁকে জানান যে, তাঁকে চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। এরপরই তিনি দায়িত্ব নেন। তবে এখানেই আপত্তি তোলে বিবাদীপক্ষ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নাম এই মামলায় টেনে আনা উচিত নয়।
সাক্ষ্যদানকারীর আরও দাবি, পদে থাকার সময় তিনি প্রবল চাপের মুখে পড়েছিলেন। মুকুল রায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিক থেকেও বেআইনি নিয়োগের জন্য চাপ এসেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে এই বক্তব্য নিয়ে আদালতে তীব্র বিতর্ক হয়। বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এগুলো সাক্ষীর ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা, মামলার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। সাক্ষীর কথায়, অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে ২০১৩ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও কারণ উল্লেখ করেননি।
এরপর তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, সাক্ষী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। কারণ, ২০১৯ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন এবং ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির ইস্তাহার তৈরির দলেরও সদস্য ছিলেন। এই প্রেক্ষিতে পার্থর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, তিনি বিজেপির হয়ে কাজ করছিলেন, তাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম সিবিআইকে দিয়েছেন। তবে সাক্ষী স্পষ্ট জবাব দেন, না, একেবারেই নয়।
শুনানির সময় বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ একাধিকবার হস্তক্ষেপ করেন। তিনি স্পষ্ট করেন, মামলার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়েই প্রশ্ন করা হবে। চাপ প্রসঙ্গে সাক্ষীর কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চান বিচারক। সাক্ষী জানান, পার্থ চট্টোপাধ্যায় একবার তাঁকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোরাজুরি করেছিলেন, যা তিনি গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। তাই শেষ পর্যন্ত পদত্যাগের পথ বেছে নেন। শুক্রবারের শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত হয়, শনিবারও বিচার চলবে। এদিন এসএসসির আরও এক প্রাক্তন আধিকারিকের সাক্ষ্য নেওয়া হতে পারে। পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত হয়েছে সোমবার।