আজ ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস। দিল্লির লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে যখন গোটা ভারত স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে, তখন এক প্রাচীন আইকন নীরবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সামনে এসেছে একটি গাড়িকে ঘিরে হাজারো না বলা গল্প।
শুক্রবার লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজের মধ্যেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি ক্লাসিক জিপ ওয়াগনিয়ার নিয়ে আসেন জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভাবনীশ কুমার।এই জিপ ওয়াগনিয়ার ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে দুটি দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে নয়া দিল্লির সেনার সদর দফতরে।ইতিহাসের পৃষ্ঠায় খুঁজলে দেখ যাবে যে এই এই জিপ ওয়াগনিয়াটি দুই প্রতিবেশী দেশের উষ্ণ সম্পর্কের বার্তা বহন করে চলে বছরের প বছর ধরে। এই বিশেষ ওয়াগনিয়ারটি ১৯৬৫ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণকে রাজকীয় উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন ভুটানের রাজা, যা হিমালয়ের কোলে অবস্থিত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কে আরও গাঢ় করে তুলেছে। এই গাড়িটি ভারতের একটি মূল্যবান সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। ২০০০ সালে, ওয়াগনিয়ারটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে স্থানান্তরিত হয়। সেনার আনুষ্ঠানিক বহরের অংশ হিসেবে সদর দফতরে রাখা হয়।
আরও পড়ুন-'স্বাধীনতার জন্য বহু দেশপ্রেমীকের আত্মত্যাগ!' বৃষ্টিতে ভিজেই জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন রাহুল
১৯৫৩ সালে মিশিগানের গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি কায়সার মোটরস-এর সঙ্গে একীভূত হয় উইলিস-ওভারল্যান্ড। নতুন কোম্পানির নাম হয় কায়সার জিপ। এর আট বছর পরে অটোমেটিক গিয়ার সমৃদ্ধ জিপের বড় ভার্সন ওয়াগনিয়ার বাজারে আসে।আধুনিক এসইউভি-এর পূর্বসূরী এ ওয়াগনিয়ার দ্রুতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হুহু করে বিক্রি হতে শুরু করে। ১৯৮৪ সালে আরও বড় ও উন্নত ভার্সন গ্র্যান্ড ওয়াগনিয়ার তৈরি হয়।১৯৭০-এর দশকে বাজারে আবির্ভাব ঘটে চেরোকি'র। আধুনিক ও বড় কাঠামোর এ মডেলের দ্রুতই উন্নতি ঘটানো হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে চালকদের জন্য হাই-এন্ড সুবিধা নিয়ে বাজারে আসে গ্র্যান্ড চেরোকি।কমপাস থেকে প্যাট্রিয়ট, রেনেগেড থেকে গ্ল্যাডিয়েটর; বর্তমান শতকে জিপের বিভিন্ন রকমের মডেল রয়েছে। নির্মাণখাতে কাজ করার জন্য যেমন পিকআপ রয়েছে, তেমনি আবার ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে বিলাসবহুল ক্যাটাগরিও।
আরও পড়ুন-'স্বাধীনতার জন্য বহু দেশপ্রেমীকের আত্মত্যাগ!' বৃষ্টিতে ভিজেই জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন রাহুল
জিপ ওয়াগনিয়ারকে আরও উল্লেখযোগ্য করে তোলে এর দীর্ঘায়ু। এটি ১৯৬৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ২৯ বছর ধরে একটানা কোনও বড় বডি রিডিজাইন ছাড়াই - এটি মার্কিন অটোমোটিভ ইতিহাসে তৃতীয় দীর্ঘতম উত্পাদিত একক-প্রজন্মের এসইউভিতে পরিণত হয়েছে। তবে, ২০২১ সালে জিপ ওয়াগনিয়ারের একটি আধুনিক সংস্করণ চালু করে, ২০২২ সালে নতুন মডেলগুলি সামনে আসে।যদিও আগের মডেলটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়া হয়েছে, তবুও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওয়াগনিয়ার ব্যবহার আপগ্রেড করা হয়েছে।বর্তমানে, এই গাড়িটি দিল্লি অঞ্চলের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-এর দায়িত্ব পালন করে, যে পদে বর্তমানে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভবনীশ কুমার রয়েছেন।প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে, জিওসি'র সদর দফতর থেকে লালকেল্লা পর্যন্ত সামরিক শৃঙ্খলাকে ঐতিহাসিক মহিমার সঙ্গে মিশ্রিত করে এবং এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ওয়াগনিয়ার, যা বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।