সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন তেলাঙ্গানার মহবুবনগর জেলার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ নিজামউদ্দিন (৩২)। পুলিশ সূত্রে খবর, রুমমেটের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও পরিবারের তরফে অভিযোগ, বিষয়টির পেছনে রয়েছে বর্ণবিদ্বেষ ও বৈষম্য। তাঁদের আরও অভিযোগ, ৩ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটলেও পরিবারকে জানানো হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর। এই টানাপোড়েনের মধ্যে মৃত্যুর আগে করা মহম্মদ নিজামউদ্দিনের একটি লিঙ্কডইন পোস্ট প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভারতী যুবক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবিদ্বেষ, হয়রানি ও চাকরি থেকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত হওয়ার দাবি করেছিলেন। তাঁর লিংকডইন পোস্টে লেখা ছিল, 'আমি বর্ণবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষী হয়রানি, অত্যাচার, বেতন প্রতারণা, বেআইনি বরখাস্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধার শিকার হয়েছি। যথেষ্ট হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী মানসিকতা শেষ হতে হবে। গত দেড় বছর ধরে চাকরিহারা নিজামুদ্দিন অভিযোগ করেছেন, তিনি আগের কোম্পানিতে বর্ণবিদ্বেষ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'কোম্পানিটি বেতন প্রতারণা করেছে। আমাকে ন্যায্য বেতন দেওয়া হয়নি। তারা অন্যায়ভাবে আমার চাকরি বরখাস্ত করেছে। এটি এখানেই শেষ নয়। তারা বর্ণবিদ্বেষীদের সাহায্যে হয়রানি এবং ভয় দেখিয়েছে।' তিনি আরও অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছিল, খাবারে বিষ মেশানো হয়েছিল এবং জোর করে বাড়ি ছাড়তেও বাধ্য করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-ফের উত্তপ্ত উপত্যকা! উধমপুরের জঙ্গিদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ, শহিদ জওয়ান
নিজামুদ্দিন লিখেছিলেন, তাঁর প্রধান আক্রমণকারীরা ছিল সহকর্মী, নিয়োগকর্তা, ক্লায়েন্টরা। তাঁর কথায়, 'আজ আমার সঙ্গে এটা ঘটছে, এবং আগামীকাল যে কারো সঙ্গেও এটা ঘটতে পারে। তাই, আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি বুঝি যে, আমি কোনও সাধু ব্যক্তি নই, তবে তাদেরও বুঝতে হবে যে তারা কোনও ঈশ্বর নয়। আমি বাকি ফাইলগুলি অন্য একটি পোস্টে আপলোড করব।' যদিও তিনি সেই পোস্টের সঙ্গে ১৯টি নথি আপলোড করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি আর কিছুই পোস্ট করেননি। জানা গেছে, নিজামউদ্দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করেছিলেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার একটি প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাঁদের দাবি, খাওয়ার মধ্যে বিষ মেশানো থেকে শুরু করে জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও নজরদারির মতো অমানবিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রেক্ষাপটেই ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরি। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে পরিবার।
আরও পড়ুন-ফের উত্তপ্ত উপত্যকা! উধমপুরের জঙ্গিদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ, শহিদ জওয়ান
নিজামুদ্দিনের দেহ বর্তমানে সান্তা ক্লারার একটি হাসপাতালে রাখা আছে। পরিবার তাঁর মৃতদেহ ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য বিদেশ মন্ত্রকের সাহায্য চেয়েছে। তাঁর বাবা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে একটি চিঠি লিখে ছেলের দেহ দ্রুত দেশে ফেরানোর আবেদন জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, 'কেন পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করল, তা আমি জানি না। আমি শুধু চাই, ওর দেহ মহবুবনগরে আনা হোক।'