বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে জটিলতা বাড়াল। এনডিএ ও মহাগঠবন্ধন, দুই শিবিরেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আবহে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথে হাঁটলেন বিহারের বিরোধী দলনেতা তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। ভোটের মুখে তিনি ঘোষণা করলেন, 'রাজ্যের ২৪৩ আসনে আমিই প্রার্থী।'
সম্প্রতি বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে 'ভোটার অধিকার যাত্রা' করছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সেই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিল কংগ্রেসের জোট সঙ্গী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, উপস্থিত ছিলেন বিহারের প্রধান বিরোধী দল লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডিও। ওই যাত্রা চলাকালীন একটি সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরজেডি নেতা, লালু-পুত্র তেজস্বী যাদব নিজেকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেন। সেই সময় অবশ্য নীরব ছিলেন রাহুল। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে শনিবার মুজাফফরপুরে এক জনসভায় থেকে তেজস্বী যাদব বলেন, 'এবার তেজস্বী ২৪৩টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বোচাহান হোক বা মুজাফফরপুর, তেজস্বী লড়াই করবে। বিহারের জনতাকে বলব প্রার্থী নয়, আমার মুখ দেখে ভোট দিন। তেজস্বী বিহারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবে... আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা এবং এই সরকারকে উৎখাত করা উচিত।' তিনি আরও বলেন, বিজেপি জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন-'BCCI-র কোনও আবেগ নেই!' ভারত-পাক মহারণে ক্ষুব্ধ পহেলগাঁওকাণ্ডে নিহতের স্ত্রী
ইতিমধ্যে বিরোধী শিবিরে আরও দুটি দল-হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এবং পশুপতি পারাসের নেতৃত্বাধীন এলজেপি (পারাস গোষ্ঠী) যোগ দিয়েছে। সেই সঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিআই(এমএল)-ও বেশি আসনের দাবি তুলছে। এরমধ্যেই তেজস্বীর সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দাবি মহাগঠবন্ধনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা তৈরি করেছে। বস্তুত, ২০২০ সালে বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি লড়েছিল ১৪৪ আসনে, জিতেছিল ৭৫।তেজস্বীকে মুখ করেই ভোটের লড়াইয়ে নামে আরজেডি। সেবার কার্যত ক্ষমতা দখলের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় মহাজোট। তবে এবার যে স্পষ্টভাবে তেজস্বীকে নিজেকে মুখ হিসাবে তুলে ধরলেন সেটা তাৎপর্যপূর্ণ।কংগ্রেস লড়েছিল ৭০ আসনে, জিতেছিল ১৯। যা নিয়ে পরে শরিকদের মধ্যে অসন্তোষও তৈরি হয়। এমনকী ২০২৪-র লোকসভাতেও বিহারে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি হাত শিবির। যার জেরে এবার তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন আরজেডি কংগ্রেসকে বেশি আসন ছাড়তে নারাজ।
আরও পড়ুন-'BCCI-র কোনও আবেগ নেই!' ভারত-পাক মহারণে ক্ষুব্ধ পহেলগাঁওকাণ্ডে নিহতের স্ত্রী
কিন্তু 'ভোটার অধিকার যাত্রা'র পর চাঙ্গা কংগ্রেস এবারও বিহারে ৭০ আসনই চাইছে। সম্প্রতি বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণা আল্লাভারুর বলেন, 'আমরা সবসময় বিশ্বাস করি যে যদি নতুন দল জোটে আসে, তাহলে প্রতিটি দলকে তাদের নিজস্ব অবদান রাখতে হবে। প্রতিটি রাজ্যেই ভালো আসন এবং খারাপ আসন রয়েছে (জয়ের সম্ভাবনার দিক থেকে)। আমরা মনে করি যে একটি দল সব ভালো আসন পাওয়া উচিত নয় এবং অন্য দল খারাপ আসন পাবে তা হতে পারে না। আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে, ভালো এবং খারাপ আসনের মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত।' তবে আরজেডির তরফ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ২৪৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেসকে বড়জোর ৫০-৫২ আসন ছাড়া হতে পারে। আবার বাড়তি আসন দাবি করছেন নতুন করে বিরোধী জোটে যোগ দেওয়া ভিআইপি পার্টির নেতা মুকেশ সাহানিও। বাম দলগুলিও (সিপিআই, সিপিআই-এম এবং সিপিআই-এমএল) একই রকম দাবি করছে। সব মিলিয়ে শরিকদের দাবি মেটাতে হিমশিম দশা আরজেডির। তেজস্বী সম্ভবত ভরা সভায় বার্তা দিয়ে রাখলেন, জোটের জট না কাটলে সব আসনে একা লড়ার ক্ষমতাও আরজেডির রয়েছে।