সম্প্রতি ভারতের উপর ২৫ শতাংশ হারে মার্কিন শুল্ক চাপিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপরই ভারতকে মৃত অর্থনীতির দেশ বলে তোপ দেগেছেন ট্রাম্প। আর মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। এই ইস্যুতে আবারও প্রকাশ্যেই রাহুল গান্ধীর বিরোধিতা করলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর।দিন দুয়েক পরে কংগ্রেস সাংসদ নাম না করে বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে দলীয় নেতা যা বলেছেন তার নেপথ্যে ওঁর নিজের কোনও কারণ রয়েছে।
রাশিয়ার থেকে তেল কেনায় ভারতের ওপর ক্ষুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহেই ২৫ শতাংশ হারে মার্কিন শুল্ক ভারতীয় পণ্যের উপর চাপানো হয়েছে। এরপরেই বৃহস্পতিবার ফের ভারত এবং রাশিয়াকে তোপ দেগেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রুথ সোশালে ট্রাম্প লেখেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে ভারত কী করছে সেটা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। ওরা দুই দেশ নিজেদের মৃত অর্থনীতি নিয়ে আরও তলিয়ে যেতে পারে। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের সমর্থন জানিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। যা নিয়েই ছড়িয়েছে বিতর্ক। তিনি বলেন, ‘কেউ তো অন্তত সত্যিটা তুলে ধরল। ভারত যে সত্যিই মৃত অর্থনীতির দেশ।'
এই আবহে রাহুলের মন্তব্যের বিরোধিতা করে শশী থারুর বলেন, 'ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্প যা বলেছেন বাস্তবটা সেরকম নয়, আমরা সবাই সেটা জানি।' তিনি আবারও বলেন, 'আমার দলীয় নেতা কী বলেছেন সেই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। উনি যা বলেছেন তার জন্য ওঁর নিজস্ব কারণ রয়েছে। তবে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমি সেটুকু নিয়ে ভাবিত। সেটা হারানোর মতো অবস্থায় আমরা নেই।কারণ, আমরা প্রায় ৯০ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রফতানি করি।' ভারতের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক চাপানো নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ বলেন, ’এই বিষয়ে আরও আলোচনা হওয়া জরুরি। তাহলে আমরা একটি নায্য চুক্তি করতে পারি। এবং পণ্য রফতানিতে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে কথা বলতে পারি। তাহলে আমরা যা হারিয়েছি তার কিছুটা ক্ষতিপূরণ সম্ভব।'
'মৃত অর্থনীতি'কে সমর্থন রাহুল গান্ধীর
ভারতের অর্থনীতিকে নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনাকে সমর্থন করেছিলেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেনছিলেন, 'হ্যাঁ, তিনি ঠিক বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ছাড়া সবাই এটি জানেন। ভারতীয় অর্থনীতি একটি মৃত অর্থনীতি। আমি খুশি যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্য বলেছেন। বিজেপি আদানিকে সাহায্য করার জন্য অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।' রাহুল আরও অভিযোগ করেন যে 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একজন ব্যবসায়ীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী কেবল একজন ব্যক্তির জন্য কাজ করেন, তিনি হলেন আদানি। এই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ঠিক তাই করবেন যা ট্রাম্প বলবেন। সরকার আমাদের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ নীতি ধ্বংস করে দিয়েছে।'
তবে রাহুল গান্ধীর মতো তীব্র সমালোচনার রাস্তায় হাঁটেননি শশী থারুর। তিনি চলমান বাণিজ্য আলোচনার মধ্যে মার্কিন শুল্ককে সম্ভবত একটি দর কষাকষির কৌশল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অতীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা শোনা গিয়েছে শশীর কণ্ঠে।পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই কংগ্রেস ও শশী থারুরের মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে কংগ্রেসের দলীয় মন্তব্যের পাশে ছিলেন না থারুর। তিরুবনন্তপুরমের সাংসদ বারবার বলেছেন যে দেশ দলের আগে আসে। এছাড়াও, কংগ্রেসের মনোনয়ন ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার থারুরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কিত প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করে। তারপর এই বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়।সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই রাহুলের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ।