আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্টকে 'দুর্ভাগ্যজনক' আখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার এই দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি এনকে সিং-র বেঞ্চ কেন্দ্র, ডিজিসিএ এবং এএআইবি (এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো)-কে নোটিস পাঠিয়েছে। শীর্ষ আদালত এই দুর্ঘটনার স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
গত জুলাইয়ে এএআইবি যে প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করে, সেখানে উল্লেখ ছিল ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল ও ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দরের কথোপকথনের। রিপোর্টে বলা হয়, ককপিট অডিও-তে ধরা পড়েছে-এক পাইলট জিজ্ঞাসা করছেন, 'ফুয়েল কাট-অফ করলে কেন?' অন্যজন উত্তর দিয়েছেন, 'আমি করিনি।' এই বক্তব্য থেকেই জল্পনা শুরু হয় যে, ভয়াবহ ওই বিপর্যয়ে পাইলটের ভুল থাকতে পারে।অ্যাভিয়েশন সেফটি সংস্থা সেফটি ম্যাটার্স ফাউন্ডেশন একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে শীর্ষ আদালতে। তাদের অভিযোগ, প্রাথমিক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছে এবং নাগরিকদের জীবন, সমতা ও সত্য তথ্য জানার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন করেছে।ওই জনস্বার্থ মামলায় বলা হয়েছে, রিপোর্টে ফুয়েল-সুইচ ত্রুটি, বৈদ্যুতিক গোলযোগের মতো সিস্টেমিক সমস্যাগুলিকে আড়াল করে পাইলটের ভুলের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। শুনানি চলাকালীন পিটিশনারের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ বলেন, 'ঘটনার ১০২ দিন পেরিয়ে গেল, অথচ এখনও কেবল প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। তাতে স্পষ্টভাবে বলা নেই কী ঘটতে পারে এবং ভবিষ্যতে কী সাবধানতা নেওয়া উচিত। ফলে, এখনও বোয়িং বিমানে যাত্রীদের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।'
আরও পড়ুন-খনি খুঁড়তেই চকচকে..., মধ্যপ্রদেশের পান্নায় মিলল হিরে! কপাল খুলল শ্রমজীবী রচনা গোলদারের!
তিনি আরও দাবি করেন, দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির মধ্যে তিনজনই ডিজিসিএ-র বর্তমান কর্মী, যা ‘গুরুতর স্বার্থের সংঘাত’ তৈরি করছে। তাঁর প্রশ্ন, যে সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, তার কর্মীরাই তদন্ত করবে কীভাবে? এরপরেই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এন কোটিস্বর সিং-এর বেঞ্চ জানায়, ন্যায্য তদন্তের দাবি যৌক্তিক হলেও সব তথ্য প্রকাশ্যে আনলে তদন্ত ব্যাহত হতে পারে। পাইলটের পরিবারের উপর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।ভূষণ জোর দিয়ে বলেন, 'রিপোর্ট সরকারকে দেওয়ার আগেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছিল যে পাইলটদের দোষারোপ করা হবে। এই ফাঁসের পরেই সবাই বলতে শুরু করল, পাইলটের ভুলেই দুর্ঘটনা। অথচ তাঁরা ছিলেন অভিজ্ঞ পাইলট। বলা হচ্ছিল, তাঁরা ইচ্ছে করে ইঞ্জিনের ফুয়েল বন্ধ করেছিলেন।' জবাবে বিচারপতি কান্ত মন্তব্য করেন, 'এগুলি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য।' তিনি আরও যোগ করেন, এমন সংবেদনশীল বিষয়ে গোপনীয়তা অপরিহার্য।
আরও পড়ুন-খনি খুঁড়তেই চকচকে..., মধ্যপ্রদেশের পান্নায় মিলল হিরে! কপাল খুলল শ্রমজীবী রচনা গোলদারের!
উল্লেখ্য, গত ১২ জুন দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়ার ১৭১ আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী বিমান টেক অফের কয়েক মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ে। বিমানের ১২ জন ক্রু ও ২২৯ জন যাত্রীই মারা যান। যে মেডিক্যাল কলেজের উপরে বিমানটি ভেঙে পড়েছিল, সেখানের ১৯ জন ছাত্র-ছাত্রীরও মৃত্যু হয়। একমাত্র বেঁচে যান বিশ্বাস কুমার।