ভারতের কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলিকে রক্ষা করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার একটি যুগান্তকারী পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। সাম্প্রতিক এক ‘প্রায় সংঘর্ষ’ ঘটনায় নিরাপত্তা হুমকি আরও স্পষ্ট হওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। পরিকল্পনায় রয়েছে বিশেষ ‘বডিগার্ড স্যাটেলাইট’ তৈরি, যা শত্রু রাষ্ট্রের কৌশলগত মহাকাশ কার্যকলাপ চিহ্নিত ও মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
এনডিটিভি-র প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের একটি মহাকাশযান ও প্রতিবেশী দেশের একটি স্যাটেলাইট প্রায় ১ কিলোমিটারের মধ্যেই চলে আসে। এটি ছিল ৫০০–৬০০ কিলোমিটার উচ্চতায়, যেখানে ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক নেটওয়ার্ক-সহ বহু যোগাযোগ স্যাটেলাইট ভিড় করছে। সূত্রের খবর, ভারতের স্যাটেলাইটটি সামরিক উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিল, যেমন ভূমি পর্যবেক্ষণ ও মানচিত্র তৈরি। প্রতিবেশী দেশের স্যাটেলাইটের এত কাছাকাছি চলে আসা কেবল কাকতালীয় নয়, বরং ক্ষমতা প্রদর্শনের ইঙ্গিত হতে পারে। যদিও সংঘর্ষ ঘটেনি, ঘটনাটি 'চোখ রাঙানি' হিসেবে ধরা হচ্ছে।
স্যাটেলাইট-সুরক্ষা প্রকল্প
নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই স্যাটেলাইট-সুরক্ষা পরিকল্পনা একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ, যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন রুপির প্রকল্প। এর আওতায় আগামী বছরে প্রথম লঞ্চের মাধ্যমে প্রায় ৫০টি নজরদারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। বস্তুত, গত সাত দশকে ভারত পাকিস্তান এবং চিন উভয়ের সঙ্গেই একাধিক সশস্ত্র সংঘাতের শিকার হয়েছে। এন২ওয়াই০ ডট কমের তথ্য অনুসারে, ভারত ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের তুলনায় মহাকাশে অনেক এগিয়ে। পাকিস্তানের স্যাটেলাইট সংখ্যা যেখানে মাত্র ৮, সেখানে ভারতের রয়েছে ১০০-এরও বেশি। তবে চিনের তুলনায় ভারত পিছিয়ে, কারণ বর্তমানে বেজিং-এর কক্ষপথে ৯৩০-রও বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে। পিপল’স লিবারেশন আর্মির মহাকাশ সক্ষমতা দ্রুত বাড়ছে বলে ভারত ও মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন, যা দুই দেশের সীমান্ত বিরোধকে নতুন মাত্রা দেয়। সম্প্রতি এয়ার মার্শাল অশুতোষ দীক্ষিতও বলেন, চিনের স্যাটেলাইট কর্মসূচি ভারতের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে।
কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই বেসরকারি স্টার্টআপদের সঙ্গে মিলে লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং স্যাটেলাইট তৈরির পথ খুঁজছে। এগুলি সম্ভাব্য হুমকি দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করবে এবং টার্গেটেড স্যাটেলাইটকে পুনঃস্থাপনের নির্দেশ পাঠানোর সময় দেবে। পাশাপাশি প্রয়োজন হবে স্থলভিত্তিক রাডার ও টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক। আইএসআরও-র প্রাক্তন কর্মকর্তা সুধীর কুমার এন বলেন, 'আমাদের এখনও ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ইন-অরবিট ট্র্যাকিং সক্ষমতা নেই, তবে কিছু স্টার্টআপ এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।' গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময় আইএসআরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তখন প্রায় ৪০০ বিজ্ঞানী দিনরাত কাজ করে যোগাযোগ ও পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটের সহায়তা করেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর আইএসআরও প্রধান ভি নারায়ণন এক ভাষণে বলেন, ঐ সংঘাতকালে চিন পাকিস্তানকে স্যাটেলাইট কাভারেজে সহায়তা করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে ভারত সরকারের ‘বডিগার্ড স্যাটেলাইট’ প্রকল্প কেবল প্রযুক্তিগত নয়, কৌশলগতও। দ্রুত ভিড় বাড়তে থাকা কক্ষপথে ভারতের জন্য এটি মহাকাশে টিকে থাকার লড়াইয়ের নতুন অধ্যায়।