বকেয়া ডিএ মামলায় এবার সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের লিখিত বক্তব্য জানাল রাজ্য সরকার। এর আগে শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কনজ্যুমার প্রাইস ইন্ডেক্স নিয়ে। এই নিয়ে লিখিত জবাবে রাজ্য সরকার এবার জানাল, দেশে ১০টি রাজ্যে ওই কনজ্যুমার প্রাইস ইন্ডেক্স মেনে ডিএ দেওয়া হয় না। এবার রাজ্যের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পালটা জবাব দিতে চান মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের হয়ে মামলা লড়া করুণা নন্দী।
এর আগে সর্বোচ্চ আদালত পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর, কর্মচারী সংগঠনগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জবাব দাখিল করবে বলে জানিয়েছিল আদালত। এই আবহে সেই সময়কালের মধ্যেই করুণা নন্দীকে জবাব দিতে বলেছে বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি বিপুল মনুভাই পাঞ্চোলির বেঞ্চ। এদিকে লিখিত বক্তব্য জমা পড়ার পরে শীর্ষ আদালতে দীপাবলির ছুটি শুরু হয়ে যাবে। এই আবহে দীপাবলির ছুটির পরেই বকেয়া ডিএ মামলার রায়দান করা হতে পারে বলে আশায় বুক বেঁধেছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। সেই দিনক্ষণ অবশ্য এখনও জানানো হয়নি।
এর আগে চূড়ান্ত শুনানির আগেও রাজ্যের তরফ থেকে শীর্ষ আদালতে ৬২ পাতার লিখিত জবাব জমা করেছিলেন কবিল সিব্বল। সেই সাবমিশনের মাধ্যমে অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন তিনি। এই ৬২ পাতায় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে মূলত দুটি যুক্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রথমত রাজ্য সরকার যুক্তি দিয়েছিল যে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী, রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে আইনত বা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য নয়। এর আগে ডিএ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট বা ট্রাইব্যুনালও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দেয়নি। এই আবহে রাজ্য নিজের আর্থিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ডিএ নির্ধারণ করতে পারে।
এদিকে রাজ্যের দ্বিতীয় যুক্তি ছিল, ভারতের প্রায় আর্ধেক রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না। এই আবহে সুপ্রিম কোর্ট যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয়, তাহলে এর প্রভাব পড়বে বাকি রাজ্যগুলোর ওপরেও। এই বিষয়টি তুলে ধরে রাজ্য বোঝাতে চেয়েছে যে এটি কেবল পশ্চিমবঙ্গের একার সমস্যা নয়, বরং সারা দেশের আরও রাজ্যেরও বিষয় এটি। কপিলের কথায়, ১৩টি রাজ্য এমন রয়েছে, যারা কেন্দ্রের হার না মেনে, নিজেদের পরিস্থিতি অনুযায়ী ডিএ-র হার নির্ধারণ করে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ সরকারও নিজেদের সাধ্য মতো ডিএ দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, পঞ্চম বেতন কমিশন অনুযায়ী বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। এর জন্য সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৭ জুন। সেদিনই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ডিএ মেটানোর সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য। এদিকে এর আগে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল যে তারা ২০০৮ সালের ১লা এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের বকেয়া ডিএ-কে মান্যতা দিচ্ছে। তবে এতকিছুর মধ্যে ডিএ মামলার চূড়ান্ত শুনানি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কর্মীদের বকেয়া ডিএ মামলা। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ সংক্রান্ত যে মামলাটি চলছে, সেটা পঞ্চম বেতন কমিশন সংক্রান্ত। ২০১৬ সাল থেকে সেই মামলা চলছে। এই মামলাটি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল, কলকাতা হাইকোর্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্টে এসেছে। প্রথমে স্যাটে জয় পেয়েছিল রাজ্য সরকার। তারপর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে জয় পেয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।