শনিবার কমলপুরের বাগানবাড়ি থেকে তৃণমূল নেতা নিখিল নায়েকের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এবার সেই ঘটনায় নিহতের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা নায়েক দুর্গাপুর থানায় বাবাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাবার কাছে কেউ নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালিয়েছে। তবে হত্যাকারীর পরিচয় বা উদ্দেশ্য এখনো রহস্যময়।
আরও পড়ুন: কোন্নগরে TMC নেতা খুনে গ্রেফতার ‘বাম আমলের ত্রাস’ কুখ্যাত গ্যাংস্টার বাঘা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিখিল নায়েকের ওপর চার মাস আগে প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টা হয়েছিল। একাধিক দুষ্কৃতী মুখ বেঁধে লাঠি নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করেছিল। নিখিলবাবু সেই সময় প্রাণে রক্ষা পান এবং পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু তিনি পুলিশে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাননি এবং বিষয়টি গোপন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ঘনিষ্ঠ মহলে। কেন তিনি সেই হামলাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন, তা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে দলের উচ্চ নেতাদের কাছে নিখিল নায়েকের বিরুদ্ধে একটি গোপন চিঠি জমা পড়ে, যেখানে কিছু নারী সম্পর্কিত অভিযোগ উল্লেখ ছিল। দল সেই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চালায়। এছাড়াও পরিবারের একটি সদস্য বিজেপি নেতা হওয়ার কারণে পারিবারিক টানাপোড়েনের কথাও সূত্রে এসেছে। যদিও মৃতার শ্যালক সৌমিত্র কোণার দাবি, নিখিলবাবু সব সম্পত্তি পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়ে দিয়েছেন, তাই পারিবারিক সম্পত্তি বিষয়ক যুক্তি সত্য নয়।
ঘটনাস্থলটি অত্যন্ত নির্জন। বাগানবাড়িতে দু’কক্ষের একটি দু’তলা ঘর এবং দূরে পরিচারকদের জন্য একটি মাটির ঘর রয়েছে। পরিবার ও অনুগামীদের তথ্য অনুযায়ী, নিখিলবাবু এখানে বেশি সময় কাটাতেন এবং প্রধানত ঘনিষ্ঠরাই তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহের মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাশেই একটি মরা মুরগি পাওয়া যায়। পুলিশ মনে করছে, হয়তো খাবারে বিষ দেওয়া হয়েছিল, যা মুরগিটিকেও হত্যা করেছে। খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে এবং কমলপুর ও রঘুনাথপুর এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিকেলে ঘটনাস্থলে ফরেনসিক দলও উপস্থিত হন। দুর্গাপুর এসিপি সুবীর রায় বলেন, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত পুরোপুরি করে হত্যাকারীর পরিচয় ও ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা হবে।