৩৭০ ধারা বাতিল মামলায় আবেদনকারীদের দাবি ছিল, কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে কোনও 'মৌলিক, স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয়' বদল আনতে পারে না। তবে আবেদনকারীদের এই দাবি নাকচ করে দেয় শীর্ষ আদাল।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়
সংবিধানের ৩৫৬ ধারার অধীনে একটি রাজ্যে অপরিবর্তনশীল পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রপতির। গতকাল ৩৭০ ধারা বাতিল সংক্রান্ত মামলার রায়ের নেপথ্যে এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করে ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট সংসদে বাতিল হয়েছিল ৩৭০ ধারা। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়ের মামলায় আবেদনকারীদের দাবি ছিল, কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে কোনও 'মৌলিক, স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয়' বদল আনতে পারে না। তবে আবেদনকারীদের এই দাবি নাকচ করে দেয় শীর্ষ আদাল। (আরও পড়ুন: ‘আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করছেন CM’, গাড়িতে ‘হামলার’ পর বিস্ফোরক রাজ্যপাল)
গতকাল এই নিয়ে রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার উপর সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা ৩৫৬ ধারার অধীনে রাষ্ট্রপতির দ্বারা জারি করা ঘোষণা কার্যকর হলে রাজ্যগুলিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ৩৫৬(১) ধারার অধীনে সংসদকে দেওয়া ক্ষমতা শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। রাজ্য বিধানসভার হয়েও সংসদ নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্র সরকারের নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপকেই আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। "প্রতিটি সিদ্ধান্তে চ্যালেঞ্জ করা হলে তা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং তাতে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। যা কার্যত প্রশাসনকে স্থবির অবস্থায় ফেলবে।' (আরও পড়ুন: সুপ্রিম বিচারপতিদের সমান বেতন নির্বাচন কমিশনারদের, সংসদে পেশ সংশোধনী বিল)
এদিকে গতকাল জাস্টিস চন্দ্রচূড় রায়দানের সময় বলেন, 'ভারতে যোগদানের সময় স্বাধীনতা বা সার্বভৌমত্ব বজায় রাখেনি জম্মু ও কাশ্মীর।' এছাড়াও জাস্টিস চন্দ্রচূড় আজ বলেন, 'আমরা মনে করি যে ৩৭০ ধারা একটি অস্থায়ী বিধান। এটি একটি অন্তর্বর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্দেশ্য প্রবর্তন করা হয়েছিল। সেই সময় জম্মু ও কাশ্মীরে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এটি একটি অস্থায়ী বিধান ছিল। এটা অস্থায়ী বিধান ছিল বলেই তা সংবিধানের ২১ নং পার্টে রাখা হয়েছিল।' বিচারপতি চন্দ্রচূড় নিজের রায়ে বলেন, 'জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান শুধুমাত্র ভারতের সাথে তার সম্পর্ককে আরও সংজ্ঞায়িত করার জন্যই ছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের কোনও অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বও ছিল না। এর সংবিধান ভারতের সংবিধানের অধীনস্থ ছিল। ৩৭০ ধারা অস্থায়ী বিধান ছিল। রাষ্ট্রপতির কাছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার ক্ষমতা ছিল। ৩৭০ ধারা বাতিল করার আগে জম্মু ও কাশ্মীরের সাংবিধানিক পরিষদের সুপারিশের কোনও প্রয়োজন ছিল না।'
অপরদিকে সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচন প্রসঙ্গে জাস্টিস চন্দ্রচূড় বলেন, 'ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থিত হয়ে সলিসিটর জেনারেল জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা অস্থায়ী পদক্ষেপ। ফের জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত নির্বাচন না হলে তা ঠিক হবে না। তাই ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। এছাড়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।'