'নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মণিপুরকে ভারতের স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার আখ্যা দিয়েছিলেন।' সংঘর্ষের ২৮ মাস পরে প্রথমবার সে রাজ্যে গিয়ে হিংসা থামানোর বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার ইম্ফলের কাংলা দূর্গের জনসভা থেকে পাহাড় ও সমতলের মধ্যে মজবুত সেতু বন্ধন গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন-মাথার দাম ছিল ১ কোটি! চার দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ে ক্লান্ত, আত্মসমর্পণ কিষেণজির স্ত্রী সুজাতার
শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুর সফরে এসে রাজ্যের জন্য প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। দীর্ঘ দিন পর তাঁর এই সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ ২০২৩ সালের মে মাসে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম তিনি ইম্ফলে পা রাখলেন। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন হয় ঐতিহাসিক কাংলা ফোর্ট কমপ্লেক্সে, যেখানে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'মণিপুরে যে কোনও ধরনের হিংসা দুর্ভাগ্যজনক। তা আমাদের পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষের প্রতি অন্যায়। তাই মণিপুরকে লাগাতার শান্তি ও সমৃদ্ধির রাস্তায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।' হিংসা থামানোর বার্তা দিতে মোদী স্বাধীনতা যুদ্ধে মণিপুরের ভূমিকা, প্রথম তেরঙা পতাকা উত্তোলন, নেতাজির উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, 'ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং প্রতিরক্ষায় মণিপুরের অবদান থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা নেওয়া উচিত। মণিপুরেই ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী প্রথমবার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। নেতাজি সুভাষ মণিপুরকে ভারতের স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার বলেছিলেন। আমাদের সরকার একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মাউন্ট হ্যারিয়েটের নামকরণ করা হয়েছে মাউন্ট মণিপুর। যা মণিপুরী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।'
আরও পড়ুন-মাথার দাম ছিল ১ কোটি! চার দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ে ক্লান্ত, আত্মসমর্পণ কিষেণজির স্ত্রী সুজাতার
এরপরেই ‘অপারেশন সিঁদুরে’ মণিপুরিদের বীরত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান মালিক এবং মণিপুরের কনস্টেবল (প্রয়াত) দীপক চিঙ্গাখামকে স্বাধীনতা দিবসে বীর চক্রে সম্মানিত করা হয়েছে। মোদী বলেন, 'অপারেশন সিঁদুরে ভারতের বীরত্ব দেখেছে দেশ। আমাদের সেনার আক্রমণে পাকিস্তান সেনার ত্রাহিরব উঠে গিয়েছিল। মণিপুরের সেনারাও সেই লড়াইয়ের সগর্ব শরিক ছিলেন। অনেক বীরের জন্ম হয়েছে এই ভূমিতে। সরকার সেখান থেকে প্রেরণা নিয়ে এগোচ্ছে।' প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, 'মণিপুরের ক্রীড়াবিদরা বাদে দেশের ক্রীড়াও অসম্পূর্ণ। এখানকার তরুণরা তেরঙার মর্যাদা উন্নত করতে জান লড়ানো নওজওয়ান। তাঁদের সেই পরিচয় যেন হিংসার কালো ছায়ায় ঢেকে না যায়। মণিপুরে শান্তি ও স্থিরতা আসুক।' তারপরেই প্রধানমন্ত্রী মোদী আশ্বাস দেন, 'শিবিরবাসীদের জীবন স্বাভাবিক করতে সরকার নিরন্তর কাজ করছে। হিংসার আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার।'