চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রথম পর্ব চূড়ান্ত হতে পারে। এমনই দাবি করছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ভারতের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে। ইতিমধ্যেই ভারত এই পদক্ষেপকে 'অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য' বলে বর্ণনা করেছে। এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে ভারত–মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি। তবে এবার ফের আশার আলোর কূটনৈতিক মহল।
বৃহস্পতিবার পাটনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, '২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে উভয় পক্ষের মন্ত্রীদের ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে একটি ভালো চুক্তি করতে হবে। সেই চুক্তির প্রথম পর্ব ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হওয়া উচিত। মার্চ মাস থেকে একটি সুষ্ঠ পরিবেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। অগ্রগতি হচ্ছে, এবং এই অগ্রগতিতে উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট।' সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে কড়া অবস্থান নিয়ে চলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে গত মঙ্গলবার হঠাৎ ইউ-টার্ন নিয়ে বলেছিলেন যে তাঁর সরকার বাণিজ্য বাধা দূর করতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। এরপরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য সামনে আসতেই ফের আশার আলোর দেখছেন কূটনীতিবিদরা।
আরও খবর-সম্পদের জোর টক্কর! এলিসনকে হারিয়ে ফের ধনকুবেরদের তালিকায় শীর্ষে মাস্ক
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, 'আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বাণিজ্য নিয়ে চলা উত্তেজনা প্রশমন করার জন্য আলোচনায় বসবে। আমার খুব ভালো বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে আমি আগ্রহী। আমি আশাবাদী যে দুই মহান দেশের মধ্যে এই আলোচনা সফল পরিণতিতে পৌঁছবে।' নরেন্দ্র মোদীকে একজন মহান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করে ট্রাম্প লেখেন, তিনি সব সময় তাঁর বন্ধু হয়ে থাকবেন। এর আগেও সম্প্রতি ভারত নিয়ে 'ইতিবাচক' বার্তা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। 'ভারতকে চিনের কাছে হারিয়েছি' বলার একদিন পরই তিনি বলেছিলেন, 'আমি মনে করি না ভারতকে আমরা হারিয়েছি।' ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের পরেই মৌনতা ভেঙেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি বলেন, 'ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুবই ভালো বন্ধু। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক আলোচনা অসীম সম্ভাবনার পথ উন্মোচন করবে। ভারতও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আলোচনায় বসতে চাইছে। আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। আশা করি আমরা ঐক্যমতে এসে দু’দেশের জনগণের জন্যই একটি উজ্জ্বল এবং আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত তৈরি করব।'
আরও খবর-সম্পদের জোর টক্কর! এলিসনকে হারিয়ে ফের ধনকুবেরদের তালিকায় শীর্ষে মাস্ক
সঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছিল। কিন্তু কয়েকমাস আগেই ভারতীয় শুল্কনীতির বিরুদ্ধে সরব হন ট্রাম্প। এছাড়াও, রাশিয়া থেকে ভারত জ্বালানি কেনায় ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকে। এমনকী ট্রাম্প পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের উপর বেশি শুল্ক আরোপ করেছিলেন। ভারত এই বিষয়ে মৌনতা অবলম্বন করলেও একমঞ্চে দেখা যায় চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। আর তারপরেই যেন সুর পাল্টায় ওয়াশিংটন। ফের একবার ভারতকে ‘বন্ধু’ আখ্যা দিয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতিতে জোর দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।