'ইজরায়েল-ইরান সংঘাতে ভারতের মৌনতা নীতিগত ও কৌশলগত ঐতিহ্যের বিরোধী।' এভাবেই নরেন্দ্র মোদী সড়কের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী। দু'সপ্তাহ ধরে চলছে ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষ। পরস্পরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে মধ্য প্রাচ্যের দুই দেশ। ইজরায়েলের রাজধানী শহর তেল আভিভে শনিবার সকাল থেকেই সাইরেনের কান ফাটানো শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে, ইজরায়েরি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে বাঁচতে ইরানের রাজধানী তেহরান জুড়ে বাড়তি সতর্কতা। এই আবহে ইজরায়েলের হানাকে ‘অবৈধ’ এবং ইরানের ‘সার্বভৌমত্বে আঘাত’ বলেও উল্লেখ করেছেন সনিয়া গান্ধী।
দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত এক উপ-সম্পাদকীয়তে কংগ্রেস নেত্রী লিখেছেন, 'কংগ্রেস ইরানের ভূখণ্ডে বোমাবর্ষণ ও লক্ষ্যভিত্তিক হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। এগুলি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। গাজায় ইজরায়েলের নৃশংস ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ অভিযানগুলির মতো এই অভিযানও নিরীহ মানুষের জীবন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে পরিচালিত হয়েছে।এই কর্মকাণ্ডগুলি কেবল অস্থিতিশীলতাকে আরও গভীর করবে এবং আরও সংঘাতের বীজ বপন করবে।' তিনি আরও লিখেছেন, 'ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়- ১৯৯৫ সালে প্রধানমন্ত্রী ইতজাক রবিনের হত্যার মাধ্যমে ইজরায়েলি ও প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক শান্তি উদ্যোগগুলি সমাপ্ত হয়। আর নেতানিয়াহু ঘৃণার আগুনকে আরও উসকে দিতে সাহায্য করছেন।'
আরও পড়ুন-নজরে ‘নোবেল’! 'ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধের জন্য...,' কৃতিত্ব নিয়ে ফের বড় দাবি ট্রাম্পের
একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন সনিয়া গান্ধী। তিনি লিখেছেন, ‘ট্রাম্প পূর্বে অন্তহীন যুদ্ধ এবং সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। তবুও তিনি এখন একই ভুলগুলি পুনরাবৃত্তি করছেন বলে মনে হচ্ছে । আরেকটি ইরাক যুদ্ধের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিচালিত করছেন।’ ২০০৩ সালে ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অভিযোগের উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রসঙ্গ টেনেছেন সনিয়া। পরে ইরাক পতনের পর জানা যায়, এমন কোনো অস্ত্র ইরাকে ছিল না। তিনি জানান, 'ইরান ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং গভীর সভ্যতার বন্ধনে আবদ্ধ। জম্মু ও কাশ্মীর-সহ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাদের অবিচল সমর্থনের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯৪ সালে ইরান কাশ্মীর ইস্যুতে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনে ভারতের সমালোচনামূলক একটি প্রস্তাব আটকাতে সাহায্য করেছিল। প্রকৃতপক্ষে ইরানের সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকেছিল। তার তুলনায় ভারতের সঙ্গে অনেক বেশি সহযোগিতাপূর্ণ আছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।'
এরপরেই তিনি কূটনৈতিক ভূমিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'এই মানবিক বিপর্যয়ের মুখে নরেন্দ্র মোদী সরকার ভারতের ঐতিহ্যগত দ্বিরাষ্ট্র সমাধান এবং শান্তিপূর্ণ কূটনীতির নীতিকে বিসর্জন দিয়েছে। গাজা এবং এখন ইরানের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের হামলার বিষয়ে নীরবতা শুধু ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান হারানো নয়, আমাদের নৈতিকতার আত্মসমর্পণও।এখনও দেরি হয়নি। ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে, দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করে মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।'
আরও পড়ুন-নজরে ‘নোবেল’! 'ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধের জন্য...,' কৃতিত্ব নিয়ে ফের বড় দাবি ট্রাম্পের
অন্যদিকে, এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই কংগ্রেস নেত্রীর তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি।বিজেপি মুখপাত্র আরপি সিং বলেন, 'সমস্যা হল কংগ্রেস। তারা তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কূটনীতি দেখছে। ভারতের অবস্থান স্পষ্ট যে উভয় দেশেরই উত্তেজনা কমানো উচিত।'