সম্প্রতি শুল্ক যুদ্ধের আবহে ভারতে নয়া রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, দীর্ঘদিনের 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' সার্জিও গোরকে তিনি এই দায়িত্বে নিয়ে এসেছেন। এবার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত হলেন ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় মোহন কোয়াত্রা ৷ যার ফলে ভারতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে কয়েক মাস ধরে যে জল্পনা-কল্পনার চলছিল তা অবসান ঘটল।এক্স পোস্টে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কোয়াত্রা বলেন, ভারতের জন্য মনোনীত রাষ্ট্রদূত ট্রাম্পের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগীদের মধ্যে একজন এবং তাঁর মনোনয়নকে ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গুরুত্ব এবং অগ্রাধিকারের লক্ষ্য হিসেবে দেখা হবে। তিনি জানান, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগীদের একজন, সার্জিও গোরকে ভারতে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনে পাঠানোর জন্য স্বাগত জানাচ্ছি। সার্জিও গোরের মনোনয়নকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন মজবুত এবং বন্ধুত্বের বন্ধন আরও গভীর করার অঙ্গীকার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।' বিনয় কোয়াত্রার এই মন্তব্য এমন এক সময় প্রকাশ্যে আসল, যখন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উত্তেজনা নিরসনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারত ও আমেরিকা তাদের বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। গত মঙ্গলবার ইউ-টার্ন নিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন যে তাঁর সরকার বাণিজ্য বাধা দূর করতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের পরেই মৌনতা ভেঙেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।২০২৩ সালের মে থেকে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদে ছিলেন এরিক গার্সেটি। গত জানুয়ারিতে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এবার গার্সেটির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন ‘ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ’ সার্জিও। গত আগস্টে ট্রুথ সোশালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ' সার্জিও গোর দীর্ঘদিন ধরে আমার সঙ্গে কাজ করছেন। আমি তাঁকে ভারতের রাষ্ট্রদূত করতে পেরে খুবই খুশি হয়েছি।' সেই সঙ্গে তাঁকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণ এবং মধ্যে এশিয়ায়। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসাবে কাজ করবেন। এতদিন মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ভার ছিল সার্জিও গোরের উপর। সে কথা মনে করিয়ে হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা জানান, খুব কম সময়ের মধ্যে সার্জিও এবং তাঁর টিমের সদস্যরা ৪ হাজার আধিকারিককে নিয়োগ করেছেন। আর তার ফলে প্রশাসনের কমবেশি ৯৫ শতাংশ জায়গায় কর্মী নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এতজনকে নিয়োগ করার বিষয়টিকে রেকর্ড বলেও অভিহিত করেছেন ট্রাম্প। সার্জিও ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। ট্রাম্পের সঙ্গে বচসার পর মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক যখন হোয়াইট হাউসের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন সার্জিওকে তিনি ‘সাপ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।সার্জিও গোর কে? বর্তমানে সার্জিও গোর হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্সিয়াল পার্সোনেল পদে রয়েছেন। তিনি বরাবরই ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। ট্রাম্প এবং টেসলার সিইও ইলন মাস্কের মধ্যে দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে সার্জিও গোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। রিপোর্ট অনুসারে, মাস্ক এবং গোরের মধ্যে কয়েক মাস ধরে মতবিরোধ চলছিল, যার ফলে মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে মাস্ক পদত্যাগ করেন। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ মাসে একটি মন্ত্রিসভার বৈঠকের সময় মাস্ক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে তর্ক হয়েছিল। গোরের নাম প্রকাশ্যে প্রকাশ করা হয়নি, তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলি বলছে যে তিনি কর্মীদের উপর মাস্কের প্রভাবের বিরুদ্ধে ছিলেন।নাসা প্রধান হিসেবে জ্যারেড আইজ্যাকম্যানের মনোনয়ন আটকাতে গোর ভূমিকা পালন করলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। মাস্কের সমর্থনে এই মনোনয়ন করা হয়েছিল, কিন্তু ট্রাম্প তা বাতিল করে দেন। পরে ট্রাম্প স্বীকার করেন যে মাস্ক এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এরপরে মাস্ক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ গোরকে 'সাপ' বলে আক্রমণ করেন এবং নিউ ইয়র্ক পোস্টের সেই প্রতিবেদনটি শেয়ার করেন, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে গোর নিজেই তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র সঠিকভাবে সম্পন্ন করেননি।