গত ৭-১০ মে অপারেশন সিঁদুরের কয়েকদিনের সংঘর্ষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের ‘জয়ের’ দাবি নিয়ে তুলোধোনা করল ভারত। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের শেহবাজের দাবির জবাব দিয়ে খবরে উঠে এসেছেন জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রথম সচিব পেটাল গেহলট। তিনি বলেছেন, অপারেশন সিন্দুরের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত পাক বিমান ঘাঁটি এবং ক্ষতিগ্রস্ত সামরিক কাঠামোর ছবি একেবারেই ভিন্নভাবে তুলে ধরেছে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: ‘ইউনুস পাকিস্তানি’, UN হেডকোয়ার্টারের সামনে তুমুল স্লোগান! নিউ ইয়র্কে চড়ল পারদ
৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভারতের উত্তর দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রথম সচিব পেটাল গাহলট বলেন, ভারতীয় বাহিনীর দ্বারা একাধিক পাকিস্তানি বিমান ঘাঁটি ধংস করা হয়েছে। সেই ছবি জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে। যদি ধংসপ্রাপ্ত রানওয়ে এবং পুড়ে যাওয়া হ্যাঙ্গারগুলি পাকিস্তানের কাছে বিজয়ের বলে মনে হয়, যেমনটি পাক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, তাহলে পাকিস্তান তা উপভোগ করতে পারে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শাহবাজ দাবি করেন, ‘আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করেছি। এখন আমরা আমাদের অংশে শান্তি বজায় রাখতে চাই। পাকিস্তান, সমস্ত অমীমাংসিত বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত।’
তবে, গেহলট শরিফের বক্তব্য সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে ঘটনার ধারাবাহিকতা একেবারেই ভিন্ন বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের একটি অদ্ভুত বিবরণও তুলে ধরেছেন। এই বিষয়ে রেকর্ড স্পষ্ট। গত ৯ মে পর্যন্ত, পাকিস্তান ভারতের উপর আরও আক্রমণের হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু ১০ মে, তাদের সেনাবাহিনী সরাসরি ভারতের কাছে যুদ্ধ বন্ধের জন্য অনুরোধ করে। তিনি আরও বলেন যে, ভারতীয় নাগরিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার জন্য আবারও পাকিস্তান দায়ী এবং নয়াদিল্লি তার জনগণকে রক্ষা করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি সরাসরি বলেন, ‘সত্য হলো, অতীতের মতো, ভারতে নিরীহ নাগরিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তান দায়ী। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের জনগণকে রক্ষা করার অধিকার প্রয়োগ করেছি এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছি।’
গেহলট অপারেশন সিন্দুরের সময় পাকিস্তানি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ভারতের হামলার প্রমাণ উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘একটি ছবি হাজারো কথা বলে। আমরা অপারেশন সিন্দুরের সময় বাহাওয়ালপুর এবং মুরিদকে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত সন্ত্রাসীদের অনেক ছবি দেখেছি। যখন পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে এই ধরনের কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের শ্রদ্ধা জানান, তখন কি এই সরকারের নীরবতা সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকতে পারে?’ পাকিস্তানের বিজয়ের দাবিকে অযৌক্তিক ও নাটক বলে দাবি করেন তিনি। গেহলট বলেন, পাকিস্তান আরও কোনও স্তরের মিথ্যা তথ্য গোপন করতে পারে না। তিনি পহেলগাঁওয়ে হামলার কথাও মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘এই দেশের সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার ইতিহাস অনেক পুরনো। তাদের কোনও লজ্জা নেই।’
উল্লেখ্য, নয়াদিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী গেহলট দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেডি শ্রী রাম কলেজ ফর উইমেন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের আগে মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়েন।
গত এক দশক ধরে, তিনি বিভিন্ন ধরণের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের সহকারী সচিব, প্যারিসে ভারতীয় দূতাবাসে তৃতীয় এবং দ্বিতীয় সচিব এবং সান ফ্রান্সিসকোতে ভারতের কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতীয় বিদেশ পরিষেবার ২০১৫ ব্যাচের একজন আধিকারিক তিনি। তবে এসবের পাশাপাশি গিটারেও সমানভাবে দক্ষ তিনি। গত মে মাসে, তিনি এক্স হ্যান্ডেলে একটি ছোট ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। তাতে তিনি গিটার বাজিয়ে বলিউড ছবি ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-এর ‘কবিরা’ গানের একটি প্রাণবন্ত অংশ গেয়েছেন। যা নেটিজেনদের প্রশংসা পেয়েছেন।