১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের। দাঙ্গার সময় দিল্লির সরস্বতী বিহারে বাবা-ছেলেকে হত্যার দায়ে মঙ্গলবার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতাকে এই কারাদণ্ড দিয়েছে দিল্লির একটি বিশেষ আদালত। এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি আদালত সজ্জন কুমারকে এই অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছিল। এছাড়া, মৃত্যুদণ্ডের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাঁর মানসিক অবস্থার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল। দিল্লির মন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা আদালতের এই রায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। যদিও আদালতের এই রায়ে খুশি নন শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ।
আরও পড়ুন : ইন্দ্রকুমার গুজরালের কথা শুনলে রোখা যেত '৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা-মনমোহন সিং
সজ্জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণার পর মন্ত্রী মজিন্দর বলেন, ‘এই মামলাগুলি ৩৫ বছর ধরে বন্ধ ছিল। সজ্জন কুমার, জগদীশ টাইটলার, কমল নাথের মতো ব্যক্তিরা মুখ্যমন্ত্রী এবং সাংসদ হিসেবে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতেন। সিট গঠন করে মামলাটি পুনরায় খোলার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে আমরা মৃত্যুদণ্ডের আশা করেছিলাম। আমরা মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে যাবো কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এবার জগদীশ টাইটলার এবং কমল নাথের পালা।’
এদিকে, যাবজ্জীবনের রায়ে খুশি নন দিল্লি শিখ গুরুদ্বার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জগদীপ সিং কাহলন। তিনি বলেন, ‘সজ্জন কুমারের মতো একজনকে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ায় আমরা মর্মাহত। আমারা মনে করি তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত। তাহলে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারতাম। ৪১ বছর পর তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবুও ন্যায়বিচারের জয় হয়েছে। আমি আদালতের রায়কে সম্মান করি।’
অন্য এক শিখ নেতা গুরলাদ সিং-ও বলেছেন, যে মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল সজ্জনের। তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের রায়ে খুশি নই। আমরা মৃত্যুদণ্ড চেয়ে উচ্চ আদালতে যাব।’ এছাড়াও, মামলায় অভিযোগকারীও সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছিল ওই বছরের ৩১ অক্টোবর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮৪ সালের জুন মাসে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরকে শিখ জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনীর অভিযানের নির্দেশ দেন। সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন ব্লু স্টার’।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিখ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারপরেই ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর দিল্লিতে শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা গান্ধী। তারপরই শুরু হয়েছিল শিখ-বিরোধী দাঙ্গা। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর যশবন্ত সিং এবং তাঁর ছেলে তরুণদীপ সিংকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের রাজ নগর এলাকায় দাঙ্গার সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি মামলায় সজ্জন কুমারকে ইতিমধ্যেই পাঁচটি খুনের জন্য দিল্লি হাইকোর্ট দোষী সাব্যস্ত করেছে। সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে হত্যায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সরকারের তরফে আদালতে দাবি করা হয়, যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার প্রতিশোধ নিতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিশাল সংখ্যক মানুষ ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং শিখ সম্পত্তি ধ্বংস করেছিলেন সেই সময়। তাঁরা মামলাকারীর বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং তাঁর স্বামী এবং ছেলেকে হত্যা করেছিলেন। তাঁদের সম্পত্তি লুট করে এবং আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, এই মামলার তদন্তের জন্য গঠিত নানাবতী কমিশন জানায় যে, দাঙ্গায় দিল্লিতে ৫৮৭টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৪০টি মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং ২৫০টি মামলায় অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিল। মাত্র ২৮টি মামলায় ৪০০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫০ জনকে খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।