তাইওয়ান ও ফিলিপিন্সকে বিধ্বস্ত করে সুপার টাইফুন রাগাসা ধেয়ে চলেছে চিনের দিকে। বুধবার চিনের তাইশান ও ঝাংজিয়াং-এর মধ্যবর্তী কোনও জায়গায় বিকেল ও সন্ধ্যার মধ্যে আছড়ে পড়বে এ বছরের সবচেয়ে ভয়ানক সামুদ্রিক ঝড় 'রাগাসা।' দক্ষিণ চীন সাগরে উদ্ভূত সুপার টাইফুন রাগাসার আঘাতে তাইওয়ানের পূর্ব প্রদেশ হুয়ালিয়েনের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, পাহাড়ি একটি হৃদের জল টেনে বাইরে আছড়ে ফেলে দিয়েছে রাগাসা। যার জেরে নিখোঁজ রয়েছে ১৫২ জন। উদ্ধার ও ত্রাণকার্যে সেনা নামানো হয়েছে।
তাইওয়ানে সুপার টাইফুনের প্রভাব
মঙ্গলবার হুয়ালিয়েনের উপকূলেই আছড়ে পড়ে 'রাগাসা।' ক্ষতিও হয়েছে এ জেলাতেই বেশি নিশ্চিত করেছেন তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা হুয়ালিয়েনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লি কুয়ান-তিন। তিনি বলেন, 'আমাদের ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী বাহিনীর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ের আঘাতে এ পর্যন্ত হুয়ালিয়েনে ১৫ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৮ জন। এছাড়া এখনও কমপক্ষে ১২৪ জন নিখোঁজ আছেন। তাদের সন্ধান পেতে উদ্ধাকারী বাহিনীর তৎপরতা চলছে।বন্যার আশঙ্কায় বুধবার স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গিয়েছেন। তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী চো জুং-তাই বিপর্যন্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, ‘যেখানে যেভাবে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা কেন কার্যকর হয়নি তা তদন্ত করতে হবে। কাউকে দোষারোপের জন্য নয়, সত্য উদঘাটনের জন্য এটা করা হবে।’ রাগাসার প্রভাবে তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চিন সাগরের তীরবর্তী অপর স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপ ভূখণ্ড হংকংয়ের উপর দিয়ে ব্যাপক মাত্রার ঝেড়ো হওয়া বয়ে গেছে, ভারি বৃষ্টিও হয়েছে। তবে হুয়ালিয়েন ব্যাতীত তাইওয়ানের অন্য কোনে জেলা কিংবা হংকং থেকে কোন নিহত, আহত বা নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়নি।
ফিলিপিন্সে ক্ষয়ক্ষতি
এর আগে সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টে নাগাদ যখন ফিলিপিন্স উপকূলে আছড়ে পড়েছিল রাগাসা, সে সময় সেখানে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৩০ কিলোমিটার। ফিলিপিন্সের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কাগায়ানের বাতানিজ দ্বীপের উপকূলে আঘাত হানে রাগাসা। এই দ্বীপটি থেকে তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলের কাছাকাছি।সুপার টাইফুন রাগাসার আঘাতে সে দেশে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি সুপার টাইফুনে প্রায় ৭০০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দমকল আধিকারিক ওয়াং সে-আন জানিয়েছেন, নিহত এবং নিখোঁজরা সকলেই গুয়াংফুতে, যেখানে জলের স্রোতে নদীর উপর একটি বড় সেতু ভেসে গেছে। গোটা গ্রামে প্রায় ১ হাজার জন বাস করেন। এই গ্রামটি প্লাবিত হয়েছে এবং অনেকেই এখনও আটকে পড়ে আছেন। রাগাসার প্রকোপে ফিলিপিন্সের সৈকত এলাকায় বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। বাড়ির ছাদ উড়ে গিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ স্কুল এবং উদ্ধার শিবিরে মাথা গুঁজেছেন।
চিনে হাই অ্যালার্ট জারি
বুধবার সকাল থেকে হংকং এবং দক্ষিণ চিনের সর্বত্র হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সকাল থেকেই ভারী বৃষ্টি ও জোরাল হাওয়া বইছে। চিন প্রশাসন ১০টি শহরে স্কুল ও যাবতীয় অফিসকাছারিতে ছুটি ঘোষণা করেছে, যতক্ষণ না বিপর্যয় পুরোপুরি কেটে যায়। ইতিমধ্যেই প্রায় ৪ লক্ষ দুর্গতকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে চিন। একমাত্র হংকংয়ের শেয়ার মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।আবহাওয়া দফতরের তরফে তাইওয়ান এবং চিনের দক্ষিণ উপকুলের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হংকং আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সুপার টাইফুন রাগাসা ঘণ্টায় ১৯৫ কিমি বেগে বইবে। এছাড়াও আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিপর্যয়ের কারণে তাইওয়ানের ১০টি শহরে সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে তাইওয়ানে সম্পূর্ণ বন্ধ বিমান পরিষেবা। ৫০০-রও বেশি বিমান বাতিল হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। হংকং অবজারভেটরির তরফে টাইফুনের জন্য সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ৪ থেকে ৫ ফুট হতে পারে জলচ্ছ্বাস, এমনটাই আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
'রাগাসা'
ফিলিপিন্সের ভাষায় রাগাসা শব্দটির অর্থ দ্রুত গতি। একে ঝড়ের রাজা বলা হয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসছে এই সুপার টাইফুন। রাগাসার প্রভাবে তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ২০০৯ সালে তাইওয়ানের দক্ষিণে টাইফুন মোরাকটের আঘাতে প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয় এবং ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।