দিল্লিতে বিএমডব্লিউ গাড়ির ধাক্কায় অর্থমন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি নভজ্যোত সিংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় জামিন পেলেন না অভিযুক্ত গগনপ্রীত কৌর। তাঁকে ফের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্ট।বুধবার পাটিয়ালা হাউস কোর্টে দিল্লির বিএমডব্লিউ দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত গগনপ্রীত কৌরের জামিনের আবেদনের শুনানি হয়। আদালতে গগনপ্রীত কৌরের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট রমেশ গুপ্তা বলেন, 'পুলিশ দুর্ঘটনার মামলাটি আইপিসি ৩০৪ (বিএনএস ১০৫ )-এ পরিবর্তন করেছে। পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে শুধুমাত্র ৩০৪ দায়ের করেছে, যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। গগনপ্রীতিকে গ্রেফতার করার ১০ ঘন্টা পরে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশ বলছে যে ৩০৪ প্রয়োগ করা হয়েছিল কারণ তারা গাড়িটি ২০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়েছিল। গগনপ্রীতের পুরো পরিবার গাড়িতে বসে ছিল। তার সন্তান এবং স্বামীও আহত হয়েছিল। ভুক্তভোগীর প্রতি আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে।' এরপরেই গগনপ্রীতের আইনজীবী আদালতে যুক্তি দেন, 'দুর্ঘটনার সময় মৃত ব্যক্তিকে একটি বাস ধাক্কা দিয়েছিল; সেই বাসটিকেও আটক করা উচিত। একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক তাঁকে নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এটি কী ধারা ৩০৪ (এ)-এর আওতায় পড়ে না? চাপের মুখে পুলিশ যে কোন কিছু করতে পারে।'জামিনের আবেদনে গগনপ্রীত কৌরের আইনজীবী বলেন, 'এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। প্রতি বছর পাঁচ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে, সেটাও দুর্ভাগ্যজনক। যদি অভিযুক্ত একজন মহিলা হয়, তাহলে আদালত মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রেও জামিন দিতে পারে।' অন্যদিকে আদালতে প্রসিকিউশন প্রশ্ন তুলেছে, দুর্ঘটনার পারি পাঁচ ঘন্টা পরে অভিযুক্ত কেন পুলিশের কাছে খবর দিলেন। যদি তিনি জানতেন যে ভুক্তভোগী গুরুতর আহত হয়েছেন, তাহলে কেন তিনি তাদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাননি? দিল্লি পুলিশও দাবি করেছে, অভিযুক্ত গগনপ্রীত ওই দুর্ঘটনায় আহত হননি। নবজ্যোত সিংয়ের পরিবারের আইনজীবী বলেন, 'নিয়ম হল আহত ব্যক্তিকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু নবজ্যোত সিংকে করিডোরে স্ট্রেচারে করে রাখা হয়েছিল এবং যে মহিলা তার সন্তানদের গাড়ি থেকে বের করে আনছিলেন, তাকে উল্টে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল।ঘটনার সূত্রপাত ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার দুপুর প্রায় দু’টো নাগাদ, রাজধানীর ঢৌলা কুয়াঁ এলাকায়। জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে নভজ্যোত এবং তাঁর স্ত্রী সন্দীপ কৌর বাইকে চেপে বাংলা সাহিব গুরুদ্বার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন।মাঝে তাঁরা কর্ণাটক ভবনে দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। দুপুর ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ তাঁরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাঝপথে দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট মেট্রো স্টেশনের কাছে পিছন থেকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি এসে ধাক্কা মারে তাঁদের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নভজ্যোতের। গুরুতর আহত হন তাঁর স্ত্রী সন্দীপ কৌর। নভজ্যোত ও সন্দীপের ছেলে নভনুর জানান, দুর্ঘটনার সময়ে ওই বিএমডব্লিউ এক্স৫ গাড়িটি এক মহিলা চালাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানান, গাড়ি চালাচ্ছিলেন এক মহিলা। দুর্ঘটনার পরে নভজ্যোতের বাইক রাস্তার ধারে একটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে।দুর্ঘটনার পরে গগনপ্রীত এবং তাঁর স্বামীই একটি ট্যাক্সিতে করে নভজ্যোত এবং সন্দীপকে জিটি বি নগরের নুলাইফ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই ওই কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিককে মৃত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই এইমস বা সফদরজং হাসপাতাল থাকতেও ১৯ কিলোমিটার দূরের জিটি বি নগরের হাসপাতালে কেন নিয়ে যাওয়া হল? নিহত আধিকারিকের ছেলের দাবি, ঘটনাস্থলের কাছের কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হত নভজ্যোতকে।