বৃহস্পতিবার দুপুরে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে টেকঅফের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী একটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিমানটিতে দুই পাইলট ও ১০ জন ক্রু সহ ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। আর সেই দুর্ঘটনায় ২৪১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। এই আবহে এই দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। প্রথমেই প্রশ্ন উঠছে, কী হয়েছিল ওই এয়ার ইন্ডিয়ার সেই বিমানে? পাখির ধাক্কায় কি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছিল? ইঞ্জিন কি দুটোই বিকল হয়ে গিয়েছিল? বিমানের ডানায় ফ্ল্যাপ কি নিষ্ক্রিয় ছিল? বিমানেপ পিছনে থাকা মালপত্রের লোড ক্যালকুলেশনে কি কোনও গলদ ছিল? (আরও পড়ুন: ভোর হতে না হতেই সত্যি হল শঙ্কা, ইরানের তেহরানে হামলা ইজরায়েলের)
আরও পড়ুন: AI বিমান দুর্ঘটনায় জারি বাড়ছে মৃতের সংখ্যা,বোয়িংয়ের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন কতজন?
এদিকে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভারতকে বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে সাহায্যের বার্তা দেয়। পরে মার্কিন ন্যাশনাল ট্র্যান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড জানায়, মার্কিন তদন্ততকারী দল ভারতে যাচ্ছে। ভারত ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিমান দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে তদন্তের ঘোষণা করছে। ভারতের এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর সঙ্গে মিলে মার্কিন তদন্তকারীরাও দুর্ঘটনাক কারণ খোঁজার চেষ্টা চালাবেন। এদিকে ব্রিটেনও একটি তদন্তকারী দল পাঠাচ্ছে ভারতে। উল্লেখ্য, লন্ডনগামী সেই বিমানে ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন।
উল্লেখ্য, আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী বিমানটি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২৩ নম্বর রানওয়ে থেকে টেকঅফ করেছিল। আকাশে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই বিমানটি মে ডে সিগন্যাল দিয়েছিল। এরপর বিমানটি থেকে আর কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দরের কাছে মেঘানি নগর এলাকায় বিমানটি ভেঙে পড়ে। ৬২৫ ফুট উচ্চতায় থাকা বিমানটি সিগন্যাল হারিয়ে দ্রুত নীচে নেমে আসে বলে জানা গেছে। বিমানটিতে ১৬৯ জন ভারতীয় নাগরিকসহ মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। এটিতে ৫৩ জন ব্রিটিশ, ১ জন কানাডিয়ান এবং ৭ জন পর্তুগিজ যাত্রী ছিল। গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও এই বিমানে ছিলেন। (আরও পড়ুন: 'ওরা নিজেরা সামলাতে পারবে…', এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা নিয়ে ভারতকে বার্তা ট্রাম্পের)
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বোয়িং ৭৮৭ বিমান এই প্রথম এত বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। ২০১৪ সালে এয়ার ইন্ডিয়া এই বিমানটি হাতে পেয়েছিল। দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানটির ক্যাপ্টেন ছিলেন সুমিত সাভারওয়াল, তাঁকে সহায়তা করছিলেন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ সুন্দর। বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদের বিজে মেডিক্যাল কলেজে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ভেঙে পড়েছিল। তাতে অন্তত পাঁচজন এমবিবিএস শিক্ষার্থী, একজন পিজির আবাসিক চিকিৎসক এবং একজন সুপার স্পেশালিস্ট চিকিৎসকের স্ত্রী নিহত হয়েছেন এবং ৬০ জনেরও বেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (এফএআইএমএ) এ তথ্য জানিয়েছে। শহরের সিভিল হাসপাতালে ২৬৫টি মৃতদেহ আনা হয়েছে বলে এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কানন দেশাই সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা যে বার্তা পেয়েছি, সে অনুযায়ী ২৬৫টি মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডিজিসিএ-র তরফে জানানো হয়েছে, উড়ানের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানের তরফে মে ডে কল করা হয়। এটি কেবল জরুরি অবস্থার সময়ই করা হয়। এই মুহূর্তে বিমানটি কী ধরনের জরুরি অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় স্থানীয় দমকল ও জরুরি বিভাগ। এ ছাড়া এনডিআরএফ দলও ঘটনাস্থলে ছিল। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নাইডুও আহমেদাবাদে পৌঁছেছেন। জানা গিয়েছে, ডিজিসিএ এবং এএআইবি অর্থাৎ এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো তদন্ত করছে। সেনাবাহিনীও সহযোগিতা করছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিমান সুরক্ষা জোরদার করতে সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ের মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি কমিটি গঠন করবে। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী কে রামমোহন নাইডু বলেছেন, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) নির্ধারিত আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি) দুর্ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। বোয়িং চেয়ারম্যান ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) কেলি অর্টবার্গ এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরনের সাথে কথা বলেছেন। এক বিবৃতিতে ওর্টবার্গ বলেন, 'এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনারের যাত্রী ও ক্রুদের পাশাপাশি আহমেদাবাদে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা রইল।'