শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকে উৎখাতের পর থেকেই মহম্মদ ইউনুসের 'নতুন' বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত কবিগুরুর পৈতৃক ভিটে কাছারি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আর সেই ঘটনা নিয়ে এবার সংসদে প্রশ্ন তুললেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে জবাবও দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
লোকসভায় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে উত্তর চেয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মোট পাঁচটি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্নগুলি হল-এই হামলায় ঘটনায় ভারত সরকারের তরফ থেকে কূটনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের সরকারের কাছে কি কোনও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে?কাছারিবাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে কোনও আশ্বাস কি পাওয়া গিয়েছে?এই হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার কি কাউকে গ্রেফতার করেছে?এই হামলার ঘটনায় ভারত সরকারের তরফ থেকে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে বা করার কথা ভাবা হয়েছে?বাংলাদেশে থাকা হেরিটেজ সম্পত্তিগুলি রক্ষা করার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের সরকারের মধ্যে কি কোনও যৌথ সমঝোতা রয়েছে? থাকলে তার বিস্তারিত বিবরণ।
বিদেশ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পাঁচ প্রশ্নের জবাব দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। জানানো হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টার জোরালো নিন্দা করা হয়েছে। বাংলাদেশকে এই ঘটনায় কঠিন শাস্তির বন্দোবস্ত করার কথা বলাও হয়েছে।তৃণমূল সাংসদের প্রথম চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিদেশ রাষ্ট্রমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১২ জুন ভারত সরকারের তরফে বাংলাদেশে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক সম্পত্তির উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঠেকাতে পদক্ষেপ করতে এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে বাংলাদেশের সরকারের কাছে।
একইসঙ্গে কীর্তি বর্ধন সিং জানান, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়িতে হামলার ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঠিকমতো আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কাছারি বাড়ির নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ প্রশ্নটির জবাবে বিদেশ রাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম রয়েছে। তার অধীনে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি ভিত্তিতে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, হেরিটেজ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর শাহজাদপুরের জমিদারি কিনে নেন। সেই সময়ই কাছারি বাড়ি ঠাকুর পরিবারের হাতে আসে। কবিগুরুও জীবনের বেশ কিছুটা সময় এই বাড়িতে কাটিয়েছেন। এরপর ১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। পরে এটিকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়। বাড়িটি বর্তমানে রবীন্দ্র যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। এই ঐতিহাসিক জায়গায় হামলার ঘটনায় নিন্দা হয়েছে নানা মহলে। সেই সময় বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সয়াল এই ঘটনাকে ‘জঘন্য’ উল্লেখ করে বলেছিলেন, 'কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চায় ভারত। এটা দুঃখের বিষয় এমন ঘটনা বারবার ঘটে চলেছে। উগ্রপন্থীরা বাংলাদেশের সহনশীলতা ও সমন্বয়মূলক সংস্কৃতির প্রতীকগুলো যেভাবে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে চলেছে, এই আক্রমণ তারই অংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।' শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিঠিও লিখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।