ছিল সামান্য জ্বর। কিন্তু ওষুধে বাগে এল না টেম্পারেচার। বরং দ্বিতীয় দিনে ঠোঁটে দেখা দিল ফোস্কা, তৃতীয় দিনে মুখ চোখ জুড়ে জড়িয়ে যাচ্ছে ফোস্কা। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান বাড়ির অভিভাবকরা। চিকিৎসকের প্রশ্ন,‘জ্বরের মধ্যে কী খেয়েছিল বাচ্চাটি?’ অভিভাবকের কথায়, ‘কিছুই না, শুধু একটা প্যারাসিটামল!’
সামান্য প্যারাসিটামলে!
পড়ে আশ্চর্য হলেও এ সত্যি ঘটনা। একাধিকবার চিকিৎসক প্রশ্ন করলেও রোগীর পরিবার বলে ওই এক কথা, ‘প্যারাসিটামল’। চিকিৎসক নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখলেন ড্রাগ অ্যালার্জি। অর্থাৎ সামান্য প্যারাসিটামল থেকেও অ্যালার্জির মতো গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শরীরে। এতটাই গুরুতর যে ফোস্কার মতো ওই দাগ ছড়িয়ে যাচ্ছে শরীরের সর্বত্র, এমনকী যৌনাঙ্গেও।
আরও পড়ুন - ইচ্ছেমতো জিমের জেরেই বাড়ছে বোন বার্নআউটের ঝুঁকি, কী বলছেন চিকিৎসক?
স্টিভেন জনসন সিনড্রোম
চিকিৎসকদের কাছে রোগটি নতুন নয়। কোনও ড্রাগ অর্থাৎ ওষুধ থেকে এমন অ্যালার্জি শরীরে দেখা দিলে তাকেই ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোম’ বলে। তবে নতুন না হলেও এই রোগ প্রাণঘাতী। দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে রোগটি শরীরের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন রোগী। প্যারাসিটামলের মতো ওষুধে অ্যালার্জি খুবই কম দেখা যায়। পরিসংখ্যান বলছে, দশ লাখে একজন। ঘটনাচক্রে সম্প্রতি যে নাবালক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তিনি ওই বিরলতম। কিন্তু কেন এই ড্রাগ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে শরীরে?
কী বলছেন চিকিৎসক?
এসএসকেএম হাসপাতালে চর্মরোগ বিভাগের চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথ দাস সংবাদমাধ্যমকে জানাচ্ছে, ‘ফাস্টফুড খাওয়ার জন্য এই ধরনের ড্রাগ রিঅ্যাকশন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আগে দশ লাখে একজন আক্রান্ত হলেও বর্তমানে পাঁচ গুণ বেড়েছে প্রকোপ।’ ফাস্টফুড কিভাবে দায়ী? চিকিৎসকের কথায় ‘ফাস্টফুডের মতো খাবার আমাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন তৈরি করে। যার ফলে শরীরের সাধারণ স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। খাবারের জেরে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নষ্ট হয়ে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ড্রাগ রিঅ্যাকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
আরও পড়ুন - ডেঙ্গি মানেই ভয় নয়, সুস্থ হওয়ার চাবিকাঠি আপনার হাতেও, কী বলছেন চিকিৎসক?
কীভাবে চেনা যায় এই রোগ?
চিকিৎসকের কথায়,‘এই রোগ কখন কীভাবে হবে তা বলা খুব মুশকিল। এমনকী আগাম কোনও পূর্বভাসও পাওয়া যায় না। তবে এই রোগ হলে ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফোস্কা বা ফোঁড়া দেখা দিতে শুরু করে। অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয় রোগীর। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত তাঁকে।’