সাধারণ ঘা, কিন্তু সারতে লেগে যাচ্ছে দুদিনের বদলে এক মাস। মামুলি সংক্রমণ, পাঁচ-ছ দিনে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার কথা, কিন্তু দু মাস ধরে শয্যাশায়ী হয়ে থাকছেন রোগী। বর্তমানে এমন ধরনের ‘কেস’ সংখ্যায় বাড়ছে বলেই মত চিকিৎসামহলের। যার নেপথ্যে অন্যতম কারণ হল অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। শরীরের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ওষুধের বিরুদ্ধে এই বিশেষ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তৈরি করছে রোগটির জীবাণুই। ক্রমেই বেড়ে চলা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সই এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসকদের কাছে।
কী বলছেন চিকিৎসক
আইএলএস হাসপাতালের কনসালটেন্ট ফিজিশিয়ান চিকিৎসক পিনাকী দে-র কথায়, ‘আগে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকেই নিউমোনিয়া বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের মতো রোগগুলি সেরে যেত। কিন্তু এখন আর সেইসব অ্যান্টিবায়োটিক কোনও কাজেই লাগছে না। কাজে এলেও রোগীর সুস্থ হতে সময় লেগে যাচ্ছে স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি।’
কখন কীভাবে তৈরি হয় এই প্রতিরোধক্ষমতা?
ডাক্তারের কথায়, ‘এই প্রতিরোধ ক্ষমতা তখনই তৈরি হয় যখন ব্যাকটেরিয়া নিজেদেরকে এমনভাবে ওষুধের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। এতে তারা সাধারণভাবে নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলিতে আর সাড়া দেয় না। ফলে, যেসব রোগীর মধ্যে সাধারণ লক্ষণ দেখা যায় ও যাদের প্রায়শই প্রচলিত ওষুধ দেওয়া হয়, তাদের কোনো সুফল হয় না। অসুস্থতা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে একটি কার্যকর বিকল্প ওষুধ খুঁজে পাওয়ার আগেই অবস্থার অবনতি ঘটে।’
আরও পড়ুন - ইচ্ছেমতো জিমের জেরেই বাড়ছে বোন বার্নআউটের ঝুঁকি, কী বলছেন চিকিৎসক?
কেন বাড়ছে এই সমস্যা?
চিকিৎসকের কথায়, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার এবং অতিরিক্ত ব্যবহারই এর কারণ। নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া, সম্পূর্ণ কোর্স শেষ না করার জন্য। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি করছে জীবাণুগুলি।কিছু ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ আজকাল দোকানে খুব সহজলভ্য। অধিকাংশ মানুষ কোনও রোগ হলে সেগুলি কিনে খেয়ে নেন ডাক্তারের পারমর্শ ছাড়া। কিন্তু নিয়ম মেনে খেতে ভুলে যান। ফলে শরীরে বাসা বাঁধে রোগ।
আরও পড়ুন - ৯০০ স্কুল থেকে ১২০০০ প্রতিযোগী! সাইকোলজির কুইজ কন্টেস্ট কলকাতার হাসপাতালে
কী করণীয় এই মুহূর্তে?
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মতো গুরুতর সমস্যাকে প্রতিহত করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ‘অভ্যাসে কিছু বদল আনতে হবে রোগীদের। নিজে থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া বন্ধ করতে হবে। ওষুধের ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে যা অনেকেই করেন না। ওষুধের ডোজ ঠিকমতো শেষ হলে জীবাণুর মধ্যে আর প্রতিরোধক্ষমতা তৈরিই হয় না।’