অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বার্বাডোজে প্রথম টেস্ট চলাকালীন বিতর্কিত আম্পায়ারিং সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামি। বিশেষ করে দ্বিতীয় দিনে তৃতীয় আম্পায়ার অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টকের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ESPNcricinfo-র প্রতিবেদনে জানা গেছে, খেলা শেষের পর ম্যাচ রেফারি জাভাগল শ্রীনাথের সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাখ্যা চান স্যামি। স্যামি আরও বলেন, সম্প্রতি ইংল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ চলাকালীনও হোল্ডস্টকের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, যেখানে তিনি দুই ম্যাচে টিভি আম্পায়ার ও এক ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরের মূল ক্ষোভের পয়েন্ট ছিল দুটি বড় সিদ্ধান্ত:
অধিনায়ক রোস্টন চেজের এলবিডব্লিউ আউট, প্যাট কামিন্সের বলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দাবি, বল ব্যাটে লেগে প্যাডে লেগেছিল, কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার সেই প্রমাণ মানেননি। শাই হোপের ক্যাচ আউট, যা বেন ওয়েবস্টারের বলে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির হাতে ধরা পড়ে। তৃতীয় আম্পায়ার একে ‘ক্লিন ক্যাচ’ হিসেবে ঘোষণা করেন, যা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়।
স্যামি বলেন, ‘আমরা শুধু বোঝার চেষ্টা করছি কীভাবে এই সিদ্ধান্তগুলোর প্রক্রিয়া চলে। আমরা কেবল চাই সিদ্ধান্তে ধারাবাহিকতা থাকুক। যখন কিছু নিয়ে সংশয় থাকে, তখন সব দলের জন্য একই রকম মানদণ্ড প্রয়োগ হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্দিষ্ট আম্পায়ারকে নিয়ে আমার অভিযোগ ইংল্যান্ড থেকেই শুরু হয়েছে। এটা হতাশাজনক। আমি শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় সামঞ্জস্য চাই।’
স্যামি স্পষ্ট করে দেন যে তিনি কোনও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনছেন না, তবে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ‘যখন একই রকম সিদ্ধান্ত বারবার এক দিকেই যায়, তখন প্রশ্ন উঠতেই পারে। আমি চাই টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে আমাদের পরিষ্কার করে বলা হোক কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে আম্পায়ারদের প্রতি আমাদের আস্থা থাকে।’
যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল কি কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেবে, তখন স্যামি বলেন, ‘এটা এখনই বলা যাচ্ছে না, অপেক্ষা করতে হবে।’ রোস্টন চেজের আউট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতে, বল ব্যাটে লেগে প্যাডে গিয়েছিল। স্পষ্ট বিচ্যুতি দেখা গিয়েছিল।’ শাই হোপের আউট নিয়ে স্যামি সরাসরি আপত্তি না জানালেও, আগের দিনের ট্র্যাভিস হেডের বিতর্কিত ক্যাচ না দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু বলছি, যা দেখা যাচ্ছে তার বিচার করুন। একই ধরনের দুটি ঘটনায় যদি একটিকে আউট না দেওয়া হয়, তাহলে অন্যটিকে আউট দিলে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ তৈরি হয়।’
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষেও ক্ষোভ ছিল। দ্বিতীয় দিনের প্রথম ওভারেই চেজের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউ রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া, যেখানে মনে করা হয়েছিল বল ব্যাটে লাগেনি। কিন্তু হোল্ডস্টক বলেন, প্রমাণ যথেষ্ট নয় সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য। মিচেল স্টার্ক বলেন, ‘স্নিকো ও রিভিউ ইমেজের সিঙ্ক ঠিক ছিল কি না, সেটাই প্রশ্ন। আমাদের মনে হয়েছিল বল ও ব্যাটের মাঝে ফাঁক ছিল। তা সত্ত্বেও সেটা খারিজ হয়।’ তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘প্রথম দিনের হেডের আউটটাও আমাদের কাছে সঠিক মনে হয়েছিল। তাই এসব নিয়ে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক।’
স্যামি জানিয়েছেন, খেলোয়াড়দের বলা হয়েছে যেন তাঁরা পাবলিকলি আম্পায়ারিং নিয়ে কিছু না বলেন, কারণ সেটি আইসিসি নিয়মে শাস্তিযোগ্য। স্যামি বলেন, ‘আমরা জানি এই ধরনের মন্তব্য করলে জরিমানা হতে পারে। আমি চাই না খেলোয়াড়রা এতে মনোযোগ হারাক। হ্যাঁ, আমরাও কিছু ভুল করেছি, অনেক ক্যাচ ফসকেছি। কিন্তু এত সব ঘটনার মাঝেও আমরা এখনো ম্যাচে জেতার অবস্থানে আছি।’