পহেলগাঁও জঙ্গিহানা ও অপারেশন সিঁদুরের পর ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচেও লেগেছে বারুদের ছোঁয়া। যার জেরে পাকিস্তানি দুই ক্রিকেটার পড়েছেন সমালোচনার ঝড়ে। ম্যাচ চলাকালীন পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফ ভারতীয় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ‘৬-০’ ইশারা করে বিতর্কের জন্ম দেন। এই ইশারা পাকিস্তানের সেই ভিত্তিহীন দাবিকে ইঙ্গিত করে যে, ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত উত্তেজনা ও অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তান নাকি ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপতিত করেছিল। অন্যদিকে, অক্ষর প্যাটেলের বলে ছক্কা মেরে অর্ধশতরান করা মাত্র পাক ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান হঠাৎ ব্যাটকে বন্দুকের মতো ধরে গুলি ছোড়ার ভঙ্গিতে সামনে তাক করে বসেন। মুহূর্তে ভাইরাল হয় সেই দৃশ্য। আর তারপরেই আস্তিন গুটিয়ে বাইশ গজে নেমে পড়েছেন রাজনৈতিক নেতারা।
রবিবার এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করেছে ভারতীয় দল। অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিলের ব্যাটিং দাপটের সৌজন্যে পাকিস্তানের দেওয়া ১৭২ রানের টার্গেট ৭ বল বাকি থাকতেই করে ফেলে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটারদের বিতর্কিত ইঙ্গিত খেলার উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে। মাঠে ফিল্ডিং করার সময় রউফকে বাউন্ডারির ধারে দাঁড়িয়ে ভারতীয় ফ্যানেদের দিকে ‘৬-০’ দেখাতে দেখা যায়। সেই মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং তা ঘিরে দুই দেশের ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে রউফ ৪ ওভার বল করে ২৬ রান দিয়ে ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন।
বিতর্কে সাহিবজাদা ফারহান
এশিয়া কাপ সুপার ফোরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দল হারলেও ব্যাট হাতে শুরুটা খারাপ করেননি পাকিস্তানের ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান। ৪৫ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটিং পারফরম্যান্সকে ছাপিয়ে যায় তাঁর বিতর্কিত উল্লাস। অক্ষর প্যাটেলের বলে ছক্কা মেরে অর্ধশতরান করা মাত্র ফারহান হঠাৎ ব্যাটকে বন্দুকের মতো ধরে গুলি ছোড়ার ভঙ্গিতে সামনে তাক করে বসেন।এই অঙ্গভঙ্গি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এবং মুহূর্তের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়ে যায়।এরপরেই তাঁর এই বিশেষ ভঙ্গিতে উদযাপন, যা পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দেয়।সাধারণ দর্শক থেকে রাজনৈতিক মহল, একযোগে একে ‘সংবেদনশীলতার অভাব’ বলে দেগে দিয়েছে।কিন্তু এত বিতর্ক, সমালোচনার পরেও ফারহান কিন্তু এতটুকু অনুতপ্ত নন। বরং সাংবাদিক সম্মেলনে দাঁড়িয়ে অকপট তাঁর স্বীকারোক্তি, আবার সুযোগ এলে এমন সেলিব্রেশন করবেন।
এর আগে ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তাল ছিল রাজনীতি। পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের স্বজন এবং একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল আগেই পাকিস্তান ম্যাচ বয়কটের পক্ষে আওয়াজ তুলেছিল। ফারহানের বিতর্কিত অঙ্গভঙ্গি সেই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত এক্সে লিখেছেন, ‘সাহিবজাদা ফারহান মাঠে প্রমাণ করে দিল পাকিস্তানি জঙ্গিরা পহেলগাঁওয়ে কীভাবে ২৬ নিরপরাধকে গুলি করে মেরেছিল-যেন কিছুই হয়নি। হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছে ব্যাটকে একে-৪৭-এর মতো ধরে গুলি চালাল! এই লজ্জা আসলে বিসিসিআই আর নরেন্দ্র মোদী সরকারের গালে থাপ্পড়। ভারতের অপমানের জন্য জয় শাহেরই তো ভারতরত্ন পাওয়া উচিত!’ অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টির শরদ সরণ এক্স বার্তায় বলেন, 'মানুষ তাকে (সাহিবজাদা ফারহানকে) গালি দিচ্ছে, বলছে যে তিনি পহেলগাঁও হামলার কথা বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এটা করেছেন। ভারতে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের নামে তিনি ভারতকে উপহাস করেছেন... মোদী যদি চাইতেন, তাহলে কি ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলত।'
আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজও হারিস রউফের আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, 'ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে, পাকিস্তানি খেলোয়াড় পুরো বিশ্বের সামনে ভারতকে উপহাস করছেন। তিনি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার অঙ্গভঙ্গি করছেন। পাকিস্তানিদের কেন বিশ্বমানের প্ল্যাটফর্ম দেওয়া হয়েছে? আমরা কেন তখনই বেরিয়ে যাইনি?' তিনি আরও জানান, 'কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের লজ্জা! পাকিস্তানের সঙ্গে ২টি ম্যাচ খেলে তারা পুরো বিশ্বকে বলে দিয়েছে যে পাকিস্তানের সঙ্গে সবকিছু ঠিক আছে। আর তাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড?' উল্লেখ্য, মাত্র কয়েক মাস আগেই, গত ২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২৬ জন। সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। যার প্রতিশোধ নিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় ভারত। বেশ কয়েকদিন সীমান্ত সংঘর্ষ জারি থাকে।