ফ্র্যাকচার হওয়া আঙুল নিয়েও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়াই! ঋষভ পন্তের লড়াকু হাফ সেঞ্চুরি দেখে অবাক সকলেই। পন্তের এই ইনিংসের সঙ্গে অনিল কুম্বলের ভাঙা চোয়াল নিয়ে খেলা ইনিংসের স্মৃতি ফেরালেন প্রাক্তনী।
এক অবাক করা মুহূর্তের সাক্ষী থাকল ম্যাঞ্চেস্টার। ভারত বনাম ইংল্যান্ডের চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিনে ডান পায়ে চোট পেয়েছিলেন ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটার ঋষভ পন্ত। এরপরেই তিনি মাঠ ছাড়েন। অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি হয়তো এই টেস্টে আর মাঠে নামতে পারবেন না। তবে ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নামেন ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ভাঙা অবস্থায়। বৃহস্পতিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শার্দূল ঠাকুর ৪১ রানে আউট হওয়ার পর, পন্তকে সিঁড়ি ধরে ধীরে ধীরে নামতে দেখা যায়—চারদিক থেকে করতালি, উচ্ছ্বাস আর দাঁড়িয়ে পন্তকে অভিবাদনের মাধ্যমে স্বাগত জানান ম্যাঞ্চেস্টার দর্শকরা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ে রান নেওয়ার সময় তাকে স্পষ্ট অস্বস্তিতে দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টির কারণে আগেভাগেই মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ঘোষণা হলে পন্তকে আবার ড্রেসিং রুমে ফিরতে হয়।
পন্তের এই সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটার দীপ দাশগুপ্ত। তিনি এই ঘটনা তুলনা করেছেন ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অনিল কুম্বলের ভাঙা চোয়াল নিয়ে বল করার ঘটনার সঙ্গে। সেই সময় মার্ভ ডিলন-এর বল কুম্বলের চোয়ালে লাগে এবং তিনি রক্তাক্ত হন। তবু ২০ মিনিট ব্যাট করার পর মুখে ব্যান্ডেজ বেঁধে টানা ১৪ ওভার বল করে ব্রায়ান লারাকে আউট করেছিলেন কুম্বলেই।
দীপ দাশগুপ্ত এক্স-এ লেখেন, ‘আমি ভেবেছিলাম কুম্বলে ভাঙা চোয়াল নিয়ে বল করতে নামার পর এমন কিছু আর দেখতে পাব না। কিন্তু ঋষভ পন্তের এই সাহসিকতা সেই স্তরেই পৌঁছেছে। এটা ঋষভ, একেবারে নিজের মতোই।’
পন্তের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন প্রাক্তন ভারতীয় অলরাউন্ডার ইরফান পাঠানও। তিনি লেখেন, ‘ঋষভ পন্ত, তুমি একজন যোদ্ধা।’ ইউসুফ পাঠান যোগ করেন, ‘দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সময় এইরকম সাহস ও লড়াইয়ের মানসিকতাই দেখাতে হয়। চোট থাকা সত্ত্বেও ব্যাট করতে নামার জন্য ঋষভ পন্তকে কুর্নিশ।’
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকেও এক্স-এ লেখা হয়, ‘ঋষভ পন্ত নামছেন... ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দারুণ অভ্যর্থনা।’ তবে বিসিসিআই জানিয়েছে, ম্যাচের বাকি অংশে পন্ত কিপিং করবেন না, তাঁর পরিবর্তে ধ্রুব জুরেল উইকেটকিপারের দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে বৃহস্পতিবার আইএএনএস জানিয়েছিল, পন্ত চরম যন্ত্রণা সত্ত্বেও ইনজেকশন নিয়ে ব্যাট করতে চেয়েছিলেন।
চোটটি লেগেছিল ভারতের ইনিংসের ৬৮তম ওভারে, যখন পন্ত অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসের বলে একটি পরিকল্পিত রিভার্স সুইপ খেলতে যান এবং বলটি ইনসাইড এজে লেগে ডান পায়ের বুটে আঘাত করে। পায়ের উপরিভাগে টেবিল টেনিস বলের মতো ফোলাভাব তৈরি হয় এবং কিছু রক্তও বের হয়। ব্যথায় কাতর পন্ত আর হাঁটতে পারছিলেন না। শেষমেশ একটি গল্ফ কারের মতো অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। তখন তিনি ৩৭ রানে ব্যাট করছিলেন, ৪৮ বলের ইনিংসে সাই সুদর্শনের সঙ্গে ৭২ রানের জুটি গড়েছিলেন।
স্ক্যান করার পর জানা যায়, ডান পায়ের পঞ্চম মেটাটারসালে চিড় ধরেছে। সেরে উঠতে অন্তত ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে। তবুও নিজের শরীরের প্রতি পরোয়া না করে দেশের জন্য মাঠে নামলেন ঋষভ পন্ত। এটাকে এক নিঃস্বার্থ, দুর্ধর্ষ সাহসিকতার উদাহরণ বলে মনে করা হচ্ছে।