মোবাইল চুরির সন্দেহে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করে পুলিশ। আর সেই ‘নির্যাতনের’ জেরেই প্রাণ হারালেন যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার আড়শা থানায়। মৃত যুবকের নাম বিষ্ণু কুমার। যুবকের মৃত্যু ঘিরে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের মারধরের কারণেই মৃত্যু হয়েছে যুবকের। যদিও পুলিশ এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে ভিন্ন কথা।
আরও পড়ুন: বেল্ট দিয়ে মারধর ওসির, গায়ে দেওয়া হয় মোমবাতির ছ্যাঁকা, গুরুতর অভিযোগ AIDSO-র
ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। স্থানীয় বাসিন্দা শংকর মাহাতোর মোবাইল হারিয়ে যায় আড়শা থানা এলাকার একটি মদ ভাটিতে। খোঁজখুঁজি করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ফোনটি রয়েছে এলাকারই যুবক বিষ্ণু কুমারের কাছে। থানায় অভিযোগ জানানো হয়। বিষ্ণুকে ডেকে পাঠায় পুলিশ। পরে ফোনটি উদ্ধারও হয়। পুলিশের দাবি, যেহেতু ফোন মিলেছে, কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি এবং তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘটনার ঠিক দু’দিন পর শনিবার রাতে বিষ্ণু আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সিরকাবাদ গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। আর এখান থেকেই শুরু বিতর্ক। পরিবারের দাবি, থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ব্যাপক মারধর করেছিল বিষ্ণুকে। তাঁর স্ত্রী নমিতা কুমারের অভিযোগ, বিষ্ণুকে শুধু সন্দেহে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। সেখানেই মারধর করে পুলিশ। ফিরে এসে তাঁর গা ঘামছিল, বমি হচ্ছিল। তারপরই শরীর খারাপ হতে থাকে। মৃতের ভাই জানান, বিষ্ণুর শরীরে অনেক ক্ষতচিহ্ন দেখা গিয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তে সেই চিহ্ন গায়েব হয়ে যায়।
তবে পুলিশের পাল্টা বক্তব্য, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোনওরকম শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি। জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মৃতদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ভিডিয়োগ্রাফি করে করা হয়েছে। চিকিৎসকের রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে ফুসফুস, কিডনি ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বিষ্ণুর। তবু মৃতের পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কিন্তু এই ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করছে না পরিবার। তাঁরা দাবি করছেন, একটি নিরপেক্ষ এবং উচ্চপর্যায়ের তদন্তের প্রয়োজন। তাদের আরও অভিযোগ, পুলিশের প্রভাবেই ময়নাতদন্তের সত্যতা লোপ পেয়েছে।
এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার আড়শা জুড়ে ডাকা হয়েছে বন্ধ। সকাল থেকেই দোকানপাট, বাজার, যান চলাচল স্তব্ধ। রাস্তায় নেমেছে উত্তেজিত জনতা। থানার গেটের সামনেই বসে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। বিক্ষোভ থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করার পরই এলাকায় উত্তেজনা চরমে ওঠে। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগও তুলেছে বিক্ষোভকারীরা।