পহেলগাঁও হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে অপারেশন সিঁদুর হলেও বেশ কয়েকটি প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে এখনও। পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে বিদেশের মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদল। সেখানে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের হয়ে জোরাল সওয়াল করেছিলেন তিনি। আর সেখান থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নৈশভোজে নয়াদিল্লিতে যোগ দিয়ে কোনও সদুত্তর পাননি। বরং সময় নষ্ট হয় তাঁর। এবার পাঁচটি প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে ফেলে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ সোমবার এক্স হ্যান্ডেলে পাঁচটি প্রশ্ন তুলে ধরেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাবদিহি চেয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার ৫৫ দিনেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, গণতন্ত্রে মূলধারার গণমাধ্যম, বিরোধী দলের সদস্যরা, অথবা বিচারবিভাগ কেউই ভারত সরকারের সামনে এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করতে এগিয়ে আসেনি। তবে জাতির কল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন নাগরিক এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে, আমি ভারত সরকারের সামনে এই পাঁচটি প্রশ্ন উত্থাপন করছি।’
কোন পাঁচটি প্রশ্ন রেখেছেন অভিষেক? অনুপ্রবেশ নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও সেটা যে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন তা বারবার বলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুতরাং নিরাপত্তা নিয়ে একটা বিতর্ক থেকেই গিয়েছে। অপারেশন সিঁদুর অভিযান করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটি সেনাবাহিনী গুঁড়িয়ে দিলেও যারা এই হামলা করেছে তাদেরকে ধরা যায়নি এখনও। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘সীমান্ত লঙ্ঘন এবং হতাহতের ঘটনা: ১. চারজন জঙ্গি কেমন করে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে একটি আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়েছিল যার ফলে ২৬ জন নিরীহ সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিল? জাতীয় নিরাপত্তায় এই বিশাল লঙ্ঘনের দায় কোথায়?’
আর কী প্রশ্ন তোলা হয়েছে? এই ঘটনার সঙ্গে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে নানা অভিযোগ সামনে আনা হয়েছে। দেশের স্বার্থে বিরোধীরা একজোট হয়ে বিদেশের মাটিতে সওয়াল করলেও নিজেদের ভুল বা গাফিলতি যেটা আছে সেটাও দেখা উচিত বলে মনে করেন অভিষেক। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং আইবি প্রধানের মেয়াদ বৃদ্ধি: ২. যদি এটি একটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা হয়, তাহলে কেন গোয়েন্দা ব্যুরো প্রধানকে একবছরের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তাও আক্রমণের মাত্র একমাস পরে? কেন তাঁকে জবাবদিহি করার পরিবর্তে পুরস্কৃত করা হয়েছিল? বাধ্যবাধকতা কী? যদি ভারত সরকার বিরোধী নেতাদের (আমি সহ), সাংবাদিক এবং বিচারকদের বিরুদ্ধে পেগাসাস স্পাইওয়্যার সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে জঙ্গি নেটওয়ার্ক এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে একই সরঞ্জাম ব্যবহার করতে বাধা কোথায়?’
আর তিনটি প্রশ্ন কী কী? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও তিনটি প্রশ্ন রেখেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এক্স হ্যান্ডেলে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘জঙ্গিদের অবস্থান: ৩. এই নৃশংস, ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী চার জঙ্গি কোথায়? তারা কি মৃত না জীবিত? যদি তাদের নিকেশ করা হয়ে থাকে, তাহলে সরকার কেন স্পষ্ট বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে? আর যদি না থাকে, তাহলে কেন নীরবতা? পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর এবং যুদ্ধবিরতি সমঝোতা: ৪. ভারত কখন পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করবে? কেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবির জবাব দেয়নি যে তিনি বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছিলেন—ঠিক যেমন জাতি, ধর্ম এবং রাজনৈতিক সম্প্রীতি নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল, ন্যায়ের বিজয় উদযাপন করেছিল এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব ও আত্মত্যাগকে অভিবাদন জানিয়েছিল? ১৪০ কোটি ভারতীয়ের আবেগকে কেন অবহেলা করা হয়েছিল? কেন এই ধরনের সমঝোতার কারণ হয়েছিল?’
আরও পড়ুন: মালদায় আবার দুই গোষ্ঠীর ব্যাপক শ্যুটআউট, গুলিবিদ্ধ টোটোচালক, তুমুল আলোড়ন
শেষ প্রশ্নটি কী করেছেন? পঞ্চম প্রশ্ন সরাসরি ভারত সরকারকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। কাঠগড়ায় তুলে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘বিশ্বের কূটনীতি এবং ভণ্ডামি: ৫. পহেলগাঁও হামলার পর গত একমাসে ৩৩টি দেশের কাছে পৌঁছনর পর, কতজন ভারতকে স্পষ্ট সমর্থন জানিয়েছে? আমরা যদি সত্যিই বিশ্বগুরু এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হই, তাহলে পহেলগাঁও হামলার পরপরই কেন আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন এবং ৪০ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অনুমোদন করেছে? সীমান্ত সন্ত্রাসবাদে বারবার জড়িত একটি দেশ কীভাবে শুধু বিশ্বব্যাপী তদন্ত এড়িয়েছে তাই নয়, বরং পুরস্কৃতও হয়েছে? আরও আশ্চর্যজনক বিষয়, মাত্র একমাস পরেই কেন পাকিস্তানকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস দমন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছিল? বিঃদ্রঃ: গত ১০ বছরে বৈদেশিক বিষয়ে দুই লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে। ভারতীয় জনগণের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং ফলাফল প্রাপ্য–নীরবতা এবং স্পিন নয়! জাতি একটি প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায়!’