ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় অভিযুক্তদের জামিন খারিজ করে রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। বীরভূমের একটি ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় রাজ্য সরকারকে তার কর্তব্য স্মরণ করিয়েছেন বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহেতা। মামলার শুনানিতে বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, যে ভাবে ভোট পরবর্তী হিংসায় বিরোধীরা আক্রান্ত হয়েছে তা গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত।
২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসায় বীরভূমে এক পরিবারের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এক বিজেপি কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর ও লুঠপাটের পর বিজেপি কর্মীর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে টেনে বার করে দুষ্কৃতীরা। এর পর তাঁকে বিবস্ত্র করে যৌন হেনস্থা করে তারা। গায়ে কেরোসিন ঢেলে কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচেন সেই বধূ।
অভিযোগ, এই ঘটনায় FIR গ্রহণ করেনি পুলিশ। এমনকী পরিবারটিকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পরামর্শ দেন পুলিশ আধিকারিকরা। সেই ঘটনায় ২০২১ সালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে FIR দায়ের করে তদন্ত শুরু করে CBI. গ্রেফতার করে ৬ তৃণমূলি দুষ্কৃতীকে। ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যায় তারা। সেই জামিনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই। সিবিআইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৬ জনের জামিনের আবেদন করে রাজ্যের পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আদালতের মন্তব্য, ‘এটা অত্যন্ত উদ্বেগের। আমরা নিশ্চিত বিবাদীসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করছিলেন।’ আদালত একটি একটি ‘স্পষ্ট প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ঘটনা’ বলেও উল্লেখ করেছে।
সর্বোচ্চ আদালতের আশঙ্কা, এই মামলায় অভিযুক্তরা মুক্ত থাকলে মামলার নিরপেক্ষ শুনানি সম্ভব নয়। কারণ অভিযুক্তরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তারা এতটাই প্রভাবশালী যে তারা FIR দায়েরেও বাধা দিয়েছিল। এতে প্রমাণিত হয় যে অভিযোগকারীর আশঙ্কা কতটা সত্য। অভিযুক্তরা এলাকাতে তো বটেই এমনকী পুলিশকেও প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।’
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে গেছেন, হিংসা ছাড়া ভোট হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামানতও জব্দ হবে। ভোট পরবর্তী হিংসায় বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলা, খুন ও অত্যাচারের যে ঘটনা ঘটেছে, তার অপরাধীরা পাতালে প্রবেশ করে থাকলেও টেনে বার করে শাস্তি দেবে বিজেপি সরকার।’
তিনি বলেন, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসায় ১ লক্ষ বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া হয়েছেন, ১২ হাজার অভিযোগ হয়েছে, ৫৬টি খুন ও ৮ – ১০টি যৌন নিগ্রহের অভিযোগের সিবিআই তদন্ত চলছে। ৪০০র বেশি তৃণমূলি গুন্ডা গ্রেফতার হয়েছে। রাজ্য পুলিশ শুনানিতে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করচে। তাই সিবিআই মামলাগুলি অন্য রাজ্যে সরানোর আবেদন করেছে। লুঙ্গিবাহিনী আক্রান্তদের ভয় দেখাচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পুলিশ। সামান্যতম সংবেদনশীলতা ও সহানুভূতি থাকলে এই সরকার আক্রান্তদের সুবিচার দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হত।