মুর্শিদাবাদ এলাকায় ঘুরেছেন মহিলা কমিশন। তার পর আজ, রবিবার সংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই ওখানকার মহিলারা ভীত সন্ত্রস্ত বলে দাবি করা হয়। এমনকী মহিলারা চাইছেন স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প চাই বলেও উল্লেখ করা হয়। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ তুলোধনা করেন মহিলা কমিশনকে। এখানেই ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। তার জেরে ভাঙচুর, লুঠপাট থেকে শুরু করে প্রাণহানি সবই ঘটেছে। মুর্শিদাবাদ, মালদার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে নানা দাবি করল জাতীয় মহিলা কমিশন। কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো রিপোর্টে বাস্তব পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হবে বলেও জানান জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকার।
এদিকে দু’দিন মহিলা কমিশনের দল বাংলায় এসেছে। মালদা এবং মুর্শিদাবাদে যায় সদস্যরা। মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে তাঁরা এখানে এসেছেন বলে দাবি করেন। দু’দিনে অনেক বাচ্চা এবং মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। যে ঘটনা ঘটছে তাতে ওখানের বাসিন্দারা অসহনীয় কষ্টে আছে বলে তাঁদের দাবি। আজ, রবিবার মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকার বলেন, ‘মুর্শিদাবাদের বাস্তব পরিস্থিতির রিপোর্ট দেওয়া হবে কেন্দ্রকে। যে পরিস্থিতি আমরা দেখলাম তা এতটা খারাপ আমি কখনো ভুলব না । এরকম সাম্প্রদায়িক ঘটনায় বেশি প্রভাব পড়ে মহিলা এবং বাচ্চাদের উপর। কয়েকশো বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, লুঠ করা হয়েছে। হুমকিও দেওয়া হয়েছে। যে ঘটনা ঘটেছে তাতে শারীরিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পড়েছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের জায়গায় ঘর বানিয়েছিল। ওনাদের সব কিছু শেষ।’
আরও পড়ুন: বিয়ের প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে গ্রেফতার বাবা–মা, পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে আলোড়ন
অন্যদিকে মহিলা কমিশনের সদস্যরা জেলার হিংসা কবলিত এলাকার মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের দাবি, ওই এলাকায় যেতেই স্থানীয় মহিলাদের একাংশ পুলিশ এবং রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। আজ কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকারের বক্তব্য, ‘মহিলারা বলছেন, বিএসএফের জন্যই তাঁরা বেঁচে আছেন। আমরা যেখানেই গিয়েছি, মহিলাদের কথায়, ওঁদের রাগে কেঁপে উঠেছি আমরা। ওঁরা সব হারিয়েছেন। ওঁরা শুধু একটাই কথা জিজ্ঞেস করছেন, ওঁদের কী দোষ? ওনাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি, পুরো দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করব। এনারা আমাদের নিজেদের লোক। এনাদের পাশে দাঁড়াতে বলবো। ওনাদের খেয়াল রাখতে হবে। মনোবল বাড়াতে হবে। যে ক্ষতি হয়েছে তা ঠিক করা আপনার দায়িত্ব। ওনাদের সুরক্ষা দেওয়া, ন্যায় দেওয়াও আপনাদের কাজ।’
তবে মহিলা কমিশনের আজকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাদের তুলোধনা করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। মেয়র বলেছেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে, বাড়ি জ্বালানো হয়েছে, দোকান জ্বালানো হয়েছে সেটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। রাজ্য সরকার তাদের শাস্তি দেবে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা অপরাধ করেছে। কিন্তু গুজরাটে যে দাঙ্গা হয়েছে সেটার কাছে এটা কিছুই না। যখন মনিপুরে আমাদের বোনদের নগ্ন করে হাঁটানো হয় তখন মহিলা কমিশন কোথায় ছিল? গত পরশুদিন বারাণসীতে আমাদের এক বোনকে ২৩ জন মিলে ধর্ষণ করেছে। তখন মহিলা কমিশন কোথায় ছিল?’ আর কুণাল ঘোষের কথায়, ‘দিল্লি থেকে আসা দুই কমিশনও বিজেপিকে রাজনৈতিক সাহায্য করার কাজ করছে। সন্দেশখালিতে আমরা যা দেখেছি, এখানেও পরে সেটা সামনে আসবে।’