IPL 2025, RR vs LSG- রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসকে ২ রানে হারিয়ে দিল লখনউ সুপার জায়ান্ট। IPL-র ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে লখনউ সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে অভিষেক হল রাজস্থান রয়্যালসের ক্রিকেটার বৈভব সূর্যবংশীর। এদিন নিয়মিত ওপেনার সঞ্জু স্যামসন চোটের জন্য খেলতে পারেননি। তাই মাত্র ১৪ বছর বয়সী বৈভবকে সুযোগ দিয়েছিল রাজস্থান টিম ম্যানেজমেন্ট। আর প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেই আইপিএলের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার বিরল নজির গড়ে ফেললেন।
বাঁহাতি বৈভব সূর্যবংশী এর আগে ভারতীয় দলের হয়ে ২০২৪ এমার্জিং এশিয়া কাপেও খেলেছিলেন। অনেকেই তাঁর পারফরমেন্স দেখে আশায় ছিলেন আইপিএলেও তাঁকে সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু এতদিন তাঁকে ডাগআউটে বসতে হলেও শনিবার ছিল তাঁরই দিন। তিনি সুযোগ পেয়ে যান আইপিএল অভিষেকের। আর সেখানেই তিনি যে পারফরমেন্স দেখালেন, তা মনে থাকবে অনেকেরই।
LSG-র করা ১৮০ রানের পাল্টা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে এসেছিলেন যশস্বী জসওয়াল এবং বৈভব সূর্যবংশী। সেখানেই নিজের আইপিএল কেরিয়ারের প্রথম বলেই সপাটে ছয় মারেন বৈভব। শার্দুল ঠাকুর বোলিং করছিলেন। আর সেই সময় প্রথম বলেই বৈভব ছয় মারেন। এরপর দ্বিতীয় ওভারেও আবেশ খানের বিরুদ্ধে একটি চার এবং একটি ছয় মারলেন তিনি। মাত্র ১৪ বছর ২৩ দিন বয়সে ১.১০ কোটি টাকায় রাজস্থানে আসা এই ক্রিকেটার এদিন করলেন ২০ বলে ৩৪ রান। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৭০।
এদিনের ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্ট দল টস জিতে প্রথমে ব্য়াটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এদিনের ম্যাচে আবারও ব্যর্থ হন ঋষভ পন্ত। তবে ওপেনার আইডেন মার্করাম এদিন ৪৫ বলে ৬৬ রান করলেন। আয়ুশ বাদোনিও হাফ সেঞ্চুরি করে পন্তদের ব্যর্থতা ঢেকে দিলেন। ৩৪ বলে ৫০ রান করলেন আয়ুশ বাদোনি। শেষদিকে ডেভিড মিলারও নেমেছিলেন কিন্তু সব আলো কেড়ে নিলেন আবদুল সামাদ। ১০ বলে ৩০ রান করে এলএসজির স্কোর নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮০ রানে নিয়ে যান তিনি। সামাদের ওই রানটাই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিল।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে যশস্বী জসওয়াল এবং বৈভব সূর্যবংশী, রাজস্থানের দুই ওপেনার পার্টনারশিপে তোলেন ৮৫ রান। ৮.৪ ওভারের মাথায় বৈভব আউট হন। আইডেন মার্করামের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে স্টাম্প আউট হন তিনি। এক্ষেত্রে পন্তের প্রশংসা করতেই হবে। নীতীশ রানাকে এরপর সাজঘরে ফেরান শার্দুল ঠাকুর, মাত্র ৮ রানেই আউট হন রানা।
তবে এরপর রাজস্থানকে ঘরের মাঠে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন যশস্বী জসওয়াল এবং এই ম্যাচের অধিনায়ক রিয়ান পরাগ। ৫২ বলে ৭৪ রান করে আউট হন যশস্বী। ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই আবেশ খানের বলে বোল্ড আউট হয়ে যান তিনি। সেই একই ওভারে রিয়ান পরাগকেও সাজঘরে ফিরিয়ে লখনউকে ম্যাচে ফেরান আবেশ খান। ২৬ বলে ৩৯ রানে আউট হন পরাগ। তাতেই খেলা বদলে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই আবেশই পন্তের দলকে জেতালেন শেষ ওভারে।
আরও মজাদার বিষয় হল, এই ম্যাচেও শেষ ওভারে বাকি ছিল ৯ রান। গত ম্যাচে মিচেল স্টার্ক যা ডিফেন্ড করেছিলেন, তা এই ম্যাচে ডিফেন্ড করতে হত আবেশ খানকে। এক্ষেত্রেও ব্যাটার হিসেবে ছিলেন সেই ধ্রুব জুরেল এবং সিমরন হেতমায়ের। ওভারের প্রথম বলে ১ রান আসে। এরপরই শুরু হয় আসল নাটক। আবেশ খান হঠাৎই বল নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং বল পরিবর্তনের অনুরোধ করেন।
এক্ষেত্রে এটিও ব্যাটারদের মনসংযোগ নষ্টের জন্যই পন্তের শেখানো কোনও স্ট্র্যাটেজি ছিল কিনা তা জানা নেই। কারণ এর আগেও চাপের সময় ব্যাটারদের ছন্দ রুখতে পন্ত সময় চুরি করে নিয়েছেন, যাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ছন্দ ভেঙেছে। এক্ষেত্রে সেটাই আবেশ করতে চাইলেন কিনা, তা জানা নেই।
দ্বিতীয় বলে ২ রান আসার পর তৃতীয় বলে হেতমায়ের আউট হয়ে যান। চতুর্থ বলটি শুভম দুবে খেলতে আসলে, সেই বলটি ইয়র্কার করেন আবেশ খান। এই বলে কোনও রান আসেনি। ফলে ২ বলে বাকি থাকে ছয় রান। পঞ্চম বলে ২ রান নেন শুভম, এক্ষেত্রে শেষ বলে চার বা ছয় মেরে দলকে জেতানোর সুযোগ পাননি ধ্রুব জুরেল, বলা যায় তিনি সেই সুযোগ নিতেও চাননি। পঞ্চম বলে অবশ্য শুভমনের ক্যাচ উঠলেও তা মিস করেন মিলার। শেষ বলটি ইয়র্কার করেন আবেশ, আসে ১ রান। তাতেই শেষ পর্যন্ত ২ রান দূরেই থেমে গেল রাজস্থানের ইনিংস। ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন আবেশ খান।