কারোর পৌষমাস,কারও সর্বনাশ। বাঙালির এই চিরন্তন প্রবাদটি কাজে লেগে গেল বাংলাদেশের মহিলা দলের। তাঁরা নিজেরা মাঠে না নামলেও তাঁদের হয়েই কাজটা করে দিল ভাগ্য এবং থাইল্যান্ডের মহিলা দল। ভারতে আয়োজিত হতে চলা ২০২৫ মহিলাদের একদিনের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিল থাইল্যান্ড দল। এক্ষেত্রে ICC Women's World Cup Qualifiers-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটা ভুলই মারাত্মক হয়ে দাঁড়াল।
ICC-র কোন সমীকরণ ছিল উইন্ডিজের?
এবারের মহিলা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। তবুও তাঁদের বিশ্বকাপের যোগ্যতা ঝুলে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম থাইল্যান্ড ম্যাচের ওপর। সেই ম্যাচে যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ১১ ওভারের মধ্যে ১৭২ রান অথবা ১০.১ ওভারের মধ্যে ১৬৭ রান তুলতে পারত, তাহলে হেলি ম্যাথিউজরাই ভারতে আসার টিকিট পেয়ে যেত এদিন।
উইন্ডিজ-থাইল্যান্ড ম্যাচে নজর ছিল
তাই সকাল থেকেই এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম থাইল্যান্ডের ম্যাচেই নজর ছিল বাংলাদেশের সকলের। সেখানেই সামান্যতম ব্যবধানে, অর্থাৎ নেট রান রেটেও একদম এক সুতোর ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে ভারতে মহিলা বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলল নিগার সুলতানাদের দল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি আইসিসির সমীকরণ অনুযায়ী ম্যাচ শেষ করতে পারত, তাহলে বাংলাদেশের থেকে তাঁদের নেট রান রেট বেশি হয়ে যেত। কিন্তু শেষদিকে স্টিফেন টেলরের একটি শট সরাসরি ছয় হয়ে যেতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মহিলা দল ম্যাচ জিতে গেলেও, তাঁদের পক্ষে আর বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব হল না।
নেট রান রেটে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ শেষে তাঁদের নেট রান রেট দাঁড়ায় ০.৬২৬, এক্ষেত্রে পয়েন্ট ৫ ম্যাচে ৬। আর বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ভর করছিল এই ম্যাচের ওপর। তাঁদেরও পাঁচ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট ছিল, আর নেট রানরেট ছিল ০.৬৩৯। ফলে সহজ হিসেবে বাংলাদেশ চলে গেল বিশ্বকাপের মূলপর্বে, সেখানে পাকিস্তানও রয়েছে। এদিন নিগার সুলতানাদের ফতিমা সানার পাকিস্তান হারিয়ে দেন ৭ উইকেটে, ৬২ বল বাকি থাকতেই।
২০২৫ মহিলা বিশ্বকাপে খেলবে কারা?
২০২২ সালের নিউজিল্যান্ডে আয়োজিত মহিলা বিশ্বকাপের পর এবার ফের ভারতে আয়োজিত বিশ্বকাপেও খেলতে আসবে বাংলাদেশ। আসন্ন বিশ্বকাপে খেলবে আয়োজক দেশ ভারত ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড।
পাকিস্তানের কাছে হারে বাংলাদেশ
আগের ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরে গেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে, আর পাকিস্তানের কাছেও বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে যাওয়ায় উইন্ডিজের সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হয়ে গেছিল বিশ্বকাপে খেলার। প্রথমে ব্যাট করে এদিন উইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৬.১ ওভারে ১৬৬ রান করে থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের বাকিরা তেমন রান না পেলেও মিডল অর্ডারে নাথাকান চানথাম ৬৬ রানের ইনিংস খেলে, ফলে থাইল্যান্ড একটা লড়াই দেওয়ার জায়গায় আসে।
ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন হেনরি-হেলি
সরাসরি মূল পর্বে যেতে উইন্ডিজের দরকার ছিল ১০.১ ওভারেই এই রান তুলে নেওয়া। অথবা আইসিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়, ১১ ওভারে ১৭২ রান তাঁদের করতে হবে। সেই মতো ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক হেলি ম্যাথিউজ পুরো টি২০ স্টাইলে ২৯ বলে ৭০ রান করেন। আরেক ওপেনার কিয়ানা জোসেফ ১২ বলে ২৬ রান করেন। চিনেলি হেনরি এসে তো চার ছয়ের ফুলঝুরি ছড়িয়ে দেন, ১৭ বলে ৪৮ রান করেন তিনিও। ১০.২ বলে ফানিতা মায়ার বলে ১৫৭ রানের মাথায় হেনরি যখন আউট হলেন তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিততে গেলে করতে হত ১৭২ রান, সেটাও ১১ ওভারের মধ্যে। কিন্তু টার্গেট তো ১৬৭, তাহলে কীভাবে সম্ভব?
আসলে উইন্ডিজকে ঠিক ঠাইল্যান্ডের স্কোর ১৬৬তে পৌঁছে, তারপর ছয় মেরে ১১ ওভারের মধ্যে ১৭২ রান তুলতে হত। ওভারের তৃতীয় বলে আলিয়াহ অ্যালিন একটি চার মারেন, চতুর্থ বলে তিনি সিঙ্গল নিয়ে স্ট্রাইক নেন স্টিফেন টেলরকে। অর্থাৎ তখন স্কোর ছিল ১৬২। সেখান থেকে উইন্ডিজকে জিততে গেলে পরের বলে চার এবং ষষ্ঠ বলেই ছয় মারতে হত। মাঝে কোনও ওয়াইড বা নো বল হলে হত না।
হিসেব ভুল করলেন টেলর
থাইল্যান্ডের বোলাররা এক্ষেত্রে সঠিক বলই করেছিলেন। কিন্তু হিসেব বুঝতে বোধহয় ভুল করেছিলেন স্টিফেন টেলর। তাই তিনি মিড অনের ওপর থেকে সপাটে ছয় মেরে উইন্ডিজকে ম্যাচ জিতিয়ে দেন। কিন্তু ম্যাচ জিতলেও যেহেতু ১৭২ রানে আর পৌঁছাতে পারল না উইন্ডিজ, ফলে তাঁদের বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ার স্বপ্নও স্বপ্নই থেকে গেল।