কলকাতা হোক কিংবা জেলা, দুর্গাপুজো মানেই শুধু থিম নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে পুরস্কারের লড়াইও। চার দশক ধরে এক বেসরকারি রং প্রস্তুতকারী সংস্থা কলকাতা ও জেলার উল্লেখযোগ্য পুজোগুলিকে পুরস্কৃত করে আসছে। বহু উদ্যোক্তার কাছে এই পুরস্কার যেন অস্কার জেতার সমান গর্বের বিষয়। কিন্তু এবারের পুজোয় সেই প্রতিযোগিতাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল বিতর্ক। একাধিক নামী পুজো কমিটি সংস্থাটির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। কেউ কেউ পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও পর্যন্ত জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পুজোর আড্ডার মাঝেই মেয়েকে চুল বেঁধে দিলেন মা কোয়েল! কাব্যকে শেখালেন শাঁখ বাজানো
প্রথমেই সরব হয়েছে মধ্য কলকাতার ঐতিহ্যশালী চোরবাগান সর্বজনীন। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, প্রতিযোগিতার নামে অন্যায় চলছে। শুরুতে তারা জানায়, নির্দিষ্ট একটি প্রতিযোগিতা বাদে আর কোথাও নাম দেবে না। পরে পরিস্থিতি ঘনীভূত হতেই ওই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতাকেই বয়কটের ডাক দেয় তারা। একইভাবে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কলকাতার কেন্দুয়া শান্তি সংঘ। তাদের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়েছে, শারদ সম্মানের যে ঐতিহ্য, শিল্প সোহাগের যে উত্তরাধিকার বহন করা হচ্ছিল, তা আজ নির্লজ্জ পক্ষপাতের ধাক্কায় ভেঙে গিয়েছে। মানুষ বিরক্ত হয়েছেন, বিভ্রান্ত নন। তাই মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যাতেও লক্ষ মানুষের পদচিহ্নে পাটুলীর কেন্দুয়া শান্তি সংঘের মণ্ডপই ভরছে। এই প্রতিবাদ দুঃখ নয়, দ্রোহ। বাকিটা মা দুর্গা আর মানুষই বুঝে নেবেন।
ক্ষোভ উগরে দিয়েছে রাজডাঙা নব উদয়ন সংঘ-ও। তাদের বক্তব্য, পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে যেভাবে পক্ষপাতদুষ্ট কার্যকলাপ হয়েছে তা সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতি অপমান। উদ্যোক্তাদের সাফ কথা, অন্যায়ের সঙ্গে কোনওভাবেই আপস করা হবে না। ন্যায়, স্বচ্ছতা ও মর্যাদার পথেই তাঁরা অটল থাকবেন। অন্যদিকে দর্শকদের মধ্যে এখনও বেসরকারি সংস্থার পুরস্কারের কদর স্পষ্ট। সরকারি সংস্থা ও রাজ্য সরকারের ‘বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান’-এর মতো পুরস্কার থাকলেও দর্শকরা ভিড় করছেন মূলত সেইসব মণ্ডপে, যেগুলি ওই সংস্থার চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে অথবা কোনও না কোনও ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের দুর্গাপুজোয় প্রতিযোগিতা আর পুরস্কারকে ঘিরে অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।