একেই হয়তো বলে ‘টিট ফর ট্যাট!’ বিশ্বের প্রতিভাবান এবং মেধাবীদের নিজের দেশে টানতে নয়া 'কে ভিসা' চালু করেছে চিন। আর এই ভিসার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-১বি ভিসার তুলনা করছে বিশ্ব। 'কে ভিসা'র মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্বের তরুণ ও মেধাবী পেশাজীবীদের চিনে আকর্ষণ করা। বিশেষভাবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ার ও গণিত অর্থাৎ এসটিইএম ক্ষেত্রের মানুষদের জন্য এই ভিসাটি তৈরি করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধির পর, চিনের এই ভিসাকে বিশ্বের দক্ষ ও মেধাবীদের জন্য নতুন দিশা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, এই দুটি ভিসার মধ্যে কোনও যোগসূত্র নেই, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধি ঘোষণা করার আগেই চিন 'কে ভিসা' চালু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে ২১ সেপ্টেম্বরের পর জমা দেওয়া সমস্ত নতুন এইচ-১বি ভিসার আবেদনের জন্য ১,০০,০০০ (প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা) মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে। যার জেরে সে দেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এমন সময়ে চিনের এই নতুন ভিসা দক্ষিণ এশিয়ার, বিশেষ করে ভারতীয় পেশাদারদের কাছে একটি নতুন সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ শতাংশ এইচ-১বি ভিসাধারীই ভারতীয়। আজ থেকে অর্থাৎ ১ অক্টোবর মার্কিন এইচ-১বি ভিসার মতো নতুন 'কে ভিসা' কার্যকর হয়েছে।
'কে ভিসা'র উদ্দেশ্য কী?
'কে ভিসা' আসলে চিনের একটি কৌশল, যাতে দেশটি আরও বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিভা ও দক্ষ জনশক্তি নিজেদের দিকে টানতে পারে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, 'এই ভিসা কর্মসূচির লক্ষ্য হল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ার ও গণিত অর্থাৎ এসটিইএম ক্ষেত্রের জ্ঞান বিনিময়কে উৎসাহিত করা। আমরা অন্যান্য দেশ থেকে আসা সেরা প্রতিভাদের সুযোগ করে দিতে চাই। চিনকে বিদেশি কর্মীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে উপস্থাপনের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে একজন চিনা বিশেষজ্ঞ বলেন, '১৯৮০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আমরা আমাদের বহু প্রতিভা হারিয়েছি। চিনা প্রতিভাবানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে বসবাস করছে। তিনি আরও বলেন, এখন আমরা স্থানীয় প্রতিভা ধরে রাখার এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিভা আকর্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। চিনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, 'কে ভিসা' প্রোগ্রামটি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এর ফলে মানুষের আবেদন করা সহজ হবে। মনে করা হচ্ছে যে চিন প্রযুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং বেজিংকে একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এই কৌশলের অংশ হিসেবে 'কে ভিসা' চালু করেছে।
চিন গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে তাদের ভিসা নীতি উন্মুক্ত করছে। এখন অনেক দেশের ভ্রমণকারীরা চিনে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারছেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আবার বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চিন ভিসামুক্ত চুক্তিও করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশিদের চিন সফরের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখে পৌঁছেছে। এরমধ্যে প্রায় ১ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করেছেন। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এইচ-১বি আবেদন ফি বাড়িয়ে বছরে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার করেছে। ফলে অনেক দক্ষিণ এশীয় পেশাজীবী, বিশেষত ভারতীয়রা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ বা পড়াশোনার পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে চিন তুলনামূলকভাবে সহজ ও কম খরচের একটি সুযোগ তৈরি করেছে।সব মিলিয়ে বলা যায়, 'কে ভিসা' চিনের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।