পাতালপথে এসপ্ল্যানেড–শিয়ালদাকে জুড়তে গিয়ে বারবার বিপত্তি হয়েছে বউবাজারে। কারণ সেখানকার মাটির চরিত্র এই কাজের চাপ নিতে পারছে না। মাটির তলায় কাজ করতে গেলেই দুর্গা পিতুরি লেন, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরছে। আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। শেষ বিপর্যয় হয়েছিল ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর। ক্রস প্যাসেজ তৈরি করার সময় জলের তোড়ে মাটি ধুয়ে একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরেছিল। তখন থেকে সুড়ঙ্গের কাজ বন্ধ। এবার নির্মাণকারী সংস্থা আইটিডি জানিয়ে দিল, বউবাজারে মাটির যা চরিত্র তাতে আর ক্রস প্যাসেজ তৈরি করা সম্ভব নয়। সুতরাং বিশ বাঁও জলে ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? মেট্রো রেল সূত্রে খবর, ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল এই প্রকল্পের কাজ। চার বছরের মধ্যে তা শেষ করার কথা হয়েছিল। কিন্তু উল্টে ১৩ বছর পর নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে যাত্রী নিষ্ক্রমণের পথ তৈরি বাধ্যতামূলক। তাই পরিকল্পনা ছিল, শিয়ালদা থেকে এসপ্ল্যানেড—এই আড়াই কিলোমিটার পাতালপথের মধ্যে পূর্ব–পশ্চিমমুখী টানেল কেটে মোট সাতটি ক্রস প্যাসেজ তৈরি করা হবে। যার মাধ্যমে আপদকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনা যাবে। আপাতত তিনটির কাজ শেষ। তবে অতীত বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে আর ক্রস প্যাসেজ তৈরি করতে নারাজ আইটিডি। সূত্রের খবর, ওয়েলিংটন থেকে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া মোড়ের মধ্যবর্তী এলাকার মাটিতে জল ও বালির ভাগ সর্বোচ্চ। ফলে আবার বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই গোটা প্রকল্পই কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ঠিক কী বক্তব্য মেট্রোর? এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের (কেএমআরসিএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর নরেশচন্দ্র কারমালি। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘এজেন্সি আমাদের জানিয়েছে বউবাজারে আর কোনও ক্রস প্যাসেজ তৈরি করবে না। বিকল্প হিসেবে বউবাজারে আপদকালীন কুয়ো তৈরির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। গোটা প্রকল্পের ডিজাইন এজেন্সি করেছে। তাই বিকল্প পথের সন্ধান ওদেরই দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বাড়তি টাকা অথবা দায়িত্ব গোটাটাই এজেন্সি বহন করবে।’