একেবারে চরম নাটকীয়তা। শেষ ওভারে যেন পরতে পরতে রোমাঞ্চ। কে জিতবে, কে হারবে, বুঝে ওঠা দায় হয়েছিল। আসলে রাজস্থান রয়্যালসের জেতার জন্য ম্যাচের শেষ ওভারে করতে হত ২২ রান। ২১ রান ডিফেন্ড করতে হত কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। বল করতে এসেছিলেন বৈভব আরোরা। প্রথম দুই বলে রান হয়েছিল ৩। বাকি চার বলে রাজস্থানকে করতে হত ১৯ রান। এর পর শুভম দুবে পুরো খেলার রং বদলে দেন। পরের তিন বলে তিনি ৬-৪-৬ হাঁকান। অর্থাৎ এই তিন বলে হয় ১৬ রান। শেষ বলে ৩ রান দরকার ছিল। একটি চার মারলেই জিতে যেত রাজস্থান।
কিন্তু টুইস্ট বাকি ছিল তার পরেও। বৈভব শেষ বলটি ইয়ার্কার করেন। বড় শট খেলতে পারেননি শুভম। লং-অফে তিনি একটি শট খেলেন। এবং দৌড়ে রান পূরণ করার চেষ্টা করেন। অন্তত ২ রান নিয়ে ম্য়াচটি ড্র করে সুপার ওভারে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য ছিল। কিন্তু বলটি দ্রুত ধরে সেটা বৈভবের দিকে সরাসরি ছুঁড়ে দেন রিঙ্কু সিং। ২ রান পূরণের আগেই নন-স্ট্রাইকার জোনে জোফ্রা আর্চারকে রানআউট করেন বৈভব। ১ রানে ম্যাচ জিতে উল্লাসে মাতে কলকাতা নাইট রাইডার্স।
এদিন রিয়ান পরাগ, শুভম দুবেদের লড়াই ব্যর্থ করে শেষ হাসি হাসে কলকাতা নাইট রাইডার্স। রবিবাসরীয় (৪ মে) ইডেনের রং শেষমেশ গোল্ডেন আর বেগুনিতেই রাঙিয়ে গেল। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসকে মাত্র ১ রানে হারিয়ে প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখল কেকেআর। স্বস্তি পেল তিলোত্তমাও।
এদিকে প্রায় দীর্ঘ এক বছর পর ইডেনে উঠেছিল ‘দ্রে রাস’ ঝড়। আর এই ঝড়ই বড় অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছিল কেকেআর। তবে রাজস্থান রয়্যালসের স্টপগ্যাপ অধিনায়ক রিয়ান পরাগ পাশা বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে সাহায্য করছিলেন শিমরন হেতমায়ের। কিন্তু হর্ষিত রানা রাজস্থানের সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দেন। দুই তারকাকেই ফেরান হর্ষিত। এতেও অবশ্য স্বস্তি মেলেনি। পরে শিবম দুবে ম্যাচের রং প্রায় বদলেই দিয়েছিলেন। কোনও মতে রক্ষা পায় নাইটরা। কেকেআর-এর দেওয়া ২০৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রাজস্থান ২০৫ রান করেই ফেলেছিল। অল্পের জন্য হাত থেকে বেরিয়ে যায় ম্যাচ।
প্লে-অফের আশা বেঁচে থাকল কেকেআর-এর
যাইহোক এদিন রাজস্থানকে ১ রানে হারিয়েও প্লে-অফের আশায় নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করল কলকাতা নাইট রাইডার্স। রাহুল দ্রাবিড়ের রাজস্থান রয়্য়ালস তো আগেই ছিটকে গিয়েছিল প্লে-অফের লড়াই থেকে। তবে রবিবার তারা যদি কেকেআর-কে হারিয়ে দিত, তবে নাইটদের প্লে-অফের আশাও কার্যত শেষ হয়ে যেত। কিন্তু সেরকম অঘটন অল্পে ঘটেনি, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরাও ১১ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পুরোদমেই রয়েছে প্লে-অফের লড়াইয়ে।
আরও পড়ুন: হয়তো পরের বছরও IPL খেলবে ও… ধোনির ছেলেবেলার কোচই এবার বড় দাবি করলেন শিষ্যের অবসর প্রসঙ্গে
দ্রে রাস ঝড়ে দু'শোর গণ্ডি পার করে কেকেআর
এদিন ইডেনে রাজস্থানের বিরুদ্ধে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। তবে শুরুতেই তারা বড় ধাক্কা খায়। দলের তারকা ওপেনার সুনীল নারিনের (৯ বলে ১১) উইকেট হারিয়ে বসে। এর পর দলের অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে এবং অপর ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ৭.৩ ওভারে ১টি ছক্কা এবং ৪টি চারের সৌজন্যে ২৫ বলে ৩৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন গুরবাজ। তখন ক্রিজে আসেন অংকৃষ রঘুবংশী। তৃতীয় উইকেটে রঘুবংশী এবং রাহানে মিলে ৪২ রান যোগ করেন। কিন্তু ২৪ বলে ৩০ করে আউট হয়ে যান রাহানেও। তিনি মেরেছিলেন ২টি ছয়, ১টি চার।
তখন ১২.৪ ওভারে দলের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১১১ রান। সেই সময়ে সকলে ভেবে নিয়েছিলেন, খুব বেশি হলে হয়তো ১৫০-১৬০ রান করতে পারবে কেকেআর। সেই সময়ে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন আন্দ্রে রাসেল। শুরুতে রাসেল ঠুকঠুকই করছিলেন। তিনি নিজের ১০ নম্বর বলে প্রথম বাউন্ডারি মারেন। প্রথম ৯ বলে রাসেলের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ২ রান। এর পর থেকে শুরু হয় চার-ছক্কার ঝড়। রাসেল ব্যক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরির গণ্ডি টপকান মাত্র ২২ বলে। অর্থাৎ পরের ১৩টি বল খেলে রাসেল সংগ্রহ করেন ৪৯ রান। শেষমেশ ৪টি চার ও ৬টি ছক্কার সাহায্যে ২৫ বলে ৫৭ রান করে অপরাজিত থাকেন দ্রে রাস। রাসেলের এমন মারকাটারি ইনিংসের সুবাদেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের ইনিংস ২০০ রানের গণ্ডি টপকাতে সক্ষম হয়। তারা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২০৬ রান সংগ্রহ করে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এর আগে রাসেল কেকেআরের হয়ে শেষ বার হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০২৪ আইপিএলের প্রথম ম্যাচে। সেবার ইডেনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ৩টি চার এবং ৭টি ছক্কার সাহায্যে ২৫ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন। এছাড়া এদিন অংকৃষ রঘুবংশী ৫টি চারের হাত ধরে ৩১ বলে ৪৪ রান করেন। ছয়ে ব্যাট করতে নেমে রিঙ্কু সিং ৬ বলে অপরাজিত ১৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস খেলেন। মারেন ২টি ছক্কা, ১টি চার। রাজস্থানের হয়ে এদিন একটি করে উইকেট নিয়েছে জোফ্রা আর্চার, যুধবীর সিং, মহেশ থিকশানা এবং রিয়ান পরাগ।
মাত্র ১ রানে পিছিয়ে পড়ল রাজস্থান
রান তাড়া করতে নেমে এদিন শুরু থেকেই ঠুকঠুক করছিল রাজস্থান রয়্যালস। বরং কেকেআর-এর বোলারদের দাপটে কিছুটা যেন গুটিয়েই গিয়েছিল আরআর। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ৮ রানের মাথায় ২ উইকেট হারিয়ে বসে থাকে তারা। এদিন ফের ব্যর্থ হন বৈভব সূর্যবংশী (২ বলে ৪ রান)। একটি চার হাঁকিয়েই তিনি সাজঘরে ফিরে যান। তিনে নেমে এদিন অভিষেক হওয়া কুণাল সিং রাঠোরও হতাশ করেন। ৫ বল খেললেও, খালি হাতে ফেরেন সাজঘরে। যশস্বী জয়সওয়ালও ১টি ছক্কা এবং ৫টি চারের হাত ধরে ২১ বলে ৩৪ করে সাজঘরে ফেরেন। ব্যর্থ হয়েছেন ধ্রুব জুরেল (০), ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (০)। তবে ষষ্ঠ উইকেট শিমরন হেতমায়েরকে সঙ্গে নিয়ে পালটা প্রত্যাঘাত করেন দলের স্টপগ্যাপ অধিনায়ক রিয়ান পরাগ।
ষষ্ঠ উইকেটে দুই তারকা মিলে যোগ করেন ৪৮ বলে যোগ করেন ৯২ রান, যেটা রাজস্থানের জন্য বড় অক্সিজেন হয়ে যায়। রিয়ান উদুম পেটাচ্ছিলেন, আর হেতমায়ের একটা দিকের উইকেট ধরে রেখেছিলেন। তবে ২৩ বলে ২৯ করে হর্ষিত রানার বলে হেতমায়ের আউট হলে বড় ধাক্কা খেয়ে যায় রাজস্থান। কারণ তাদের ছন্দপতন ঘটে। এর পরেও অবশ্য বড় শট খেলা থামাননি রিয়ান। তবে রিয়ানকেও ফেরান রানা। ৪৫ বলে ৯৫ রানের দুরন্ত একটি ইনিংস খেলে আউট হন রিয়ান। মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন তিনি। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ৮টি ছক্কা এবং ৬টি চারে। রিয়ান পরাগ যখন সাজঘরে ফিরে যাচ্ছেন, তখন ১৭.৪ ওভারে রাজস্থানের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১৭৩ রান। জেতার জন্য তখন আরআর- এর দরকার ১৪ বলে ৩৪ রান।
সেই সময়ে রাজস্থান কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু হাল ছাড়েনি তারা। শুভম দুবে এবং জোফ্রা আর্চার মিলে দলকে জেতানোর মরিয়া চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৮ বলে ১২ করে শেষমেশ জোফ্রা রানআউট হওয়াতেই ১ রানে ম্যাচ হেরে যায় রাজস্থান। ২টি ছক্কা এবং ১টি চারের হাত ধরে ১৪ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন শুভম দুবে। কেকেআর-এর হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মইন আলি, হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী। একটি উইকেট নিয়েছেন বৈভব আরোরা।