একদিকে যখন রাজ্য পুলিশ দাবি করছে, মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে বাবা-ছেলের খুনের ঘটনায় চলা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে এসেছে, অন্যদিকে সেই পুলিশের বিরুদ্ধেই নিহত বাবা ও ছেলের পরিবারের সদস্যদের উপর 'অত্যাচার' করার অভিযোগ উঠল! যদিও সেই ঘটনায় পুলিশের দাবি ভিন্ন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পুরসভার অন্তর্গত জাফরাবাদের বাসিন্দা - নিহত হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসের পরিবারের সদস্যরা নাকি সম্প্রতি কলকাতা লাগোয়া সল্টলেকে এসে থাকছিলেন! তাঁরা সল্টলেকের একটি বাড়িতেই ছিলেন। অভিযোগ, আজ (রবিবার - ৪ মে, ২০২৫) সেই বাড়িতে 'অভিযান' চালায় পুলিশ। তারা নাকি দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে!
অন্যদিকে, পুলিশের বক্তব্য হল - তাদের কাছে এই নিহত বাবা-ছেলের পরিবারেরই কোনও এক সদস্য অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁদের অপহরণ করা হয়েছে! সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই মুর্শিদাবাদের পুলিশ সল্টলেকে পৌঁছে যায় এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চায়।
দাবি করা হচ্ছে, পরিবারের সদস্যরা নাকি পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চাননি এবং তারপরই পুলিশ দরজার ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। এসবের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বিজেপির বেশ কয়েকজন নেতা! তাঁদের মধ্যে ছিলেন - শঙ্কুদেব পণ্ডা, তরুণজ্যোতি তিওয়ারি, সজল ঘোষ প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গে পুলিশের বচসাও হয়।
সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য অনুসারে - এই ঘটনার পর নিহত বাবা-ছেলের পরিবারের সদস্যরা সল্টলেকের ওই বাড়ি ছেড়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাসভবনে গিয়ে আশ্রয় নেন। গোটা ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই রহস্য দানা বেঁধেছে।
কারণ - একথা ঠিক যে মুর্শিদাবাদের ওয়াকফ প্রতিবাদ চলাকালীন হিংসার যে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই সময়েই আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছিলেন হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাস। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি প্রথম থেকেই এই ঘটনাকে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হিসাবে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ করেছে। অন্যদিকে, পুলিশের দাবি - হিংসার সময়ে ঘটা এই ঘটনা নাকি আদতে ব্যক্তিগত শত্রুতার ফল!
ইতিমধ্য়েই এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে এবং লাগাতার ধরপাকড় চলছে। শনিবার (৩ মে, ২০২৫) জানা যায়, একসঙ্গে তিন জেলায় অভিযান চালিয়ে তিন অভিযুক্ত পাকড়াও করেছে পুলিশ। যার জেরে এই ঘটনায় সব মিলিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হয় ১০।
এই প্রেক্ষাপটে নিহত বাবা-ছেলের পরিবারের সল্টলেকে এসে থাকা, সেখানে 'অপহরণের তদন্তে আসা' পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ এবং ঘটনাস্থলে বিজেপি নেতাদের পৌঁছে যাওয়া - এই গোটা ঘটনাপ্রবাহ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।