পুজো এবং শীত, এই দুই পর্যটন মরশুমে উত্তরবঙ্গ বরাবরই জনপ্রিয় গন্তব্য। ডুয়ার্স, দার্জিলিং, গ্যাংটক ঘুরতে যাওয়া ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বিগত কয়েক বছর ধরেই প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এনবিএসটিসি)। জনপ্রিয়তা ও যাত্রী সাড়া দু’দিকেই ভালো ফল মিলেছে। তবে তার বিপরীতে, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার পর্যটন প্যাকেজ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলমহল ঘিরেই নেওয়া হয়েছে বড় সিদ্ধান্ত। এবারে জোর দেওয়া হচ্ছে রুট সম্প্রসারণ এবং পরিষেবার মানোন্নয়নে।
আরও পড়ুন: আরও আরাম এবার বাসে, আসনের মাপ বলল পরিবহণ দফতর, নয়া বিধিতে দরজা নিয়েও আপডেট
পুজোর আগে শাল, পলাশ ঘেরা জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এই অঞ্চলের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সংযোগ আরও সুদৃঢ় করতে বাড়ানো হচ্ছে বাসের সংখ্যা। বিশেষ করে, শিলিগুড়ির সঙ্গে বিভিন্ন রুটে নিয়মিত চলাচলকারী বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এসবিএসটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বাঁকুড়া থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য এসি বাস পরিষেবা রয়েছে। এবার বহরমপুর থেকেও শিলিগুড়িগামী এসি বাস চালানো হবে। পুরুলিয়া রুটেও এসি বাস নামানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, শীতকাল এবং পুজোর ছুটিতে দক্ষিণবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্রে যে যাত্রীচাপ তৈরি হয়, তা সামাল দিতে বাস পরিষেবা বাড়ানো ছাড়া আর উপায় নেই। তবে এখানেই থেমে নেই প্রশ্ন। দক্ষিণবঙ্গের নিজস্ব পর্যটন প্যাকেজ চালু করার কথা বহুদিন ধরেই বলছিল এসবিএসটিসি। তাহলে সেটি কেন বাস্তবায়িত হল না?
সূত্রের খবর, সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যান দীপ্তাংশু চৌধুরী পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোট, অযোধ্যা পাহাড়, জয়চণ্ডী পাহাড়, বড়ন্তী লেক, বাঁকুড়ার শুশুনিয়া, বিষ্ণুপুর ও মুকুটমণিপুরের মতো গন্তব্যগুলিকে একত্রিত করে একাধিক আকর্ষণীয় প্যাকেজের পরিকল্পনা করেছিলেন। এমনকি শক্তিগড়ে যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য একটি বিশাল জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফুড কোর্ট, শৌচাগার, বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বাসচালক-কন্ডাক্টরদের রেস্টরুম তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হল না কেন? সুভাষ মণ্ডলের ব্যাখ্যা, পর্যটকদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সেই কারণেই আপাতত প্যাকেজ ট্যুর প্রকল্পটি স্থগিত রাখতে হয়েছে।
যদিও পরিবহণ দফতরের একাংশ মনে করছেন, ঠিকঠাক প্রচার ও টার্গেটেড রুট পরিকল্পনার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্প। কারণ, দক্ষিণবঙ্গেও পর্যটন কেন্দ্রের অভাব নেই। তবে প্যাকেজে সৃজনশীলতা ও পরিষেবার মান না বাড়ালে শহুরে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ তৈরি করা কঠিন।