ঝাড়গ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় তিনটি হাতির মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে। এ বার ওই মর্মান্তিক ঘটনার দায়ে রেলের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল রাজ্য বন দফতর। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন জনশতাব্দী এক্সপ্রেসের চালক, সরডিহা স্টেশনের ম্যানেজার ও খড়্গপুর ডিভিশনের ডিভিশনাল ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর।
আরও পড়ুন: ঝাড়গ্রামে মর্মান্তিক ঘটনা, ট্রেনের ধাক্কায় ৩ হাতির মৃত্যু, ব্যাহত ট্রেন চলাচল
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাঁশতলা স্টেশন লাগোয়া রেললাইনে যখন ২৫টি হাতির একটি দল পার হচ্ছিল। তখনই হঠাৎ ডাউন জনশতাব্দী এক্সপ্রেস এসে ধাক্কা মারে। তাতেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় এক মা হাতি ও তার দু’টি শাবকের। এর ঠিক পরেই বন দফতর স্পষ্টভাবে অভিযোগ তোলে, রেলের তরফে কোনও রকম পূর্ব সতর্কতা নেওয়া হয়নি। তাদের বক্তব্য, বারবার জানানো সত্ত্বেও রেল প্রশাসন করিডরে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করেনি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ঝাড়গ্রাম জিআরপি তদন্ত শুরু করেছে। মামলা রুজু হয়েছে ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৭২’, ‘এলিফ্যান্ট প্রিজারভেশন অ্যাক্ট, ১৮৭৯’ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৫ ধারায় (স্বেচ্ছায় গুরুতর আঘাত করার অভিযোগ)।
বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে রেল ও বন দফতরের উচ্চ পর্যায়ের যৌথ পরিদর্শন হয়েছে। খড়্গপুর ডিভিশনের ডিআরএম কে আর চৌধুরী এবং দক্ষিণবঙ্গের মুখ্য বন্যপ্রাণ আধিকারিক সন্দীপ সুন্দ্রিয়ালের উপস্থিতিতে হিজলিতে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে স্থির হয় করিডর চিহ্নিতকরণ, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে হাতির গতিবিধির আগাম নজরদারি এবং লাইন সংলগ্ন ড্রেনে স্ল্যাব বসানোর মতো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, কিছু করিডরে থাকা লোহার রেলিং বাধা তৈরি করছে হাতির চলাচলে। সেগুলি সরিয়ে দেওয়া নিয়েও আলোচনা চলছে। করিডরের জায়গাগুলি আরও উন্মুক্ত করে তুলতে চায় রেল। এদিকে, ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় সমাজকর্মী মহল। শনিবার ঝাড়গ্রাম শহরের সিধু-কানহো মূর্তির পাদদেশে ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’-এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভা হয়। ‘জঙ্গলমহল স্বরাজ মোর্চা’ রাজ্যপালের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রীর কাছে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়ে ই-মেলের মাধ্যমে চিঠিও পাঠিয়েছে।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, এই ঘটনায় রেল কর্মীদের দায়বদ্ধ করা হয়েছে। এফআইআর করা হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী দিনে রেল ও বন দফতরের সমন্বয় আরও মজবুত করা হবে। ঘটনার তীব্রতা বুঝেই এখন দুটি দফতরই হাতির করিডরে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে একসঙ্গে উদ্যোগ নিচ্ছে।