বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ভিতর এক বিচারাধীন বন্দির মৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বুধবার সকালে সংশোধনাগারের বাথরুম থেকে উদ্ধার হয় শুভব্রত দত্ত নামে এক বন্দির ঝুলন্ত দেহ। ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার কথা বললেও, মৃতের পরিবারের অভিযোগ, এই মৃত্যু ‘স্বাভাবিক নয়’, বরং এটি ‘পূর্বপরিকল্পিত খুন’। (আরও পড়ুন: কলকাতার থেকে গ্রেফতার 'বাংলাদেশি' হিন্দু যুবতী, মিলল দুই দেশের পরিচয়পত্র)
আরও পড়ুন: পুলিশ হেফাজতে বন্দিকে পিটিয়ে মৃত্যুর অভিযোগ, নরেন্দ্রপুরের ঘটনায় তদন্ত কোন পথে?
শুভব্রতের বিরুদ্ধে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে পকসো আইনে মামলা চলছিল। প্রায় দশ মাস ধরে তিনি বিচারাধীন বন্দি হিসেবে ওই সংশোধনাগারেই ছিলেন। জেল সুপার ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মৃত বন্দির মধ্যে মানসিক অবসাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। বিশেষ করে একাধিকবার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি মানসিক অবসাদে ছিলেন। তাঁরা দাবি করেছেন, আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনও কারণ নেই। কারণ বন্দি শুভব্রত সংশোধনাগারের বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছিলেন এবং কোনও হুমকি বা বহিরাগত প্রভাবের আভাস মেলেনি। (আরও পড়ুন: বাংলায় প্রথম এসি লোকাল ট্রেন চালু হবে কবে? জানা গেল দিনক্ষণ, ভাড়া হতে পারে কত?)
আরও পড়ুন: কোন্নগরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন তৃণমূল নেতাকে, হাতের কবজি কেটে ঝুলতে দেখা যায়
আরও পড়ুন: বিধাননগর-কল্যাণী, বালিগঞ্জ-সোনারপুর, বারাসত-বসিরহাট রুটে নয়া লোকাল ট্রেন
তবে মৃতের পরিবার এই দাবিকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, শুভব্রতকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। মৃতের মামা অভিজিৎ সাধু সরাসরি অভিযোগ করেন, তাঁকে পিটিয়ে মেরে শৌচাগারের জানালার গ্রিলে জুতোর ফিতেয় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পা ছিল মাটিতে ভাঁজ হয়ে ছিল। গলার সামনের অংশে ছিল ক্ষত। মুখে কাপড় গুঁজে হত্যা করা হয়েছে যাতে আওয়াজ না বেরোয়। তাঁর আরও অভিযোগ, আত্মহত্যার সাধারণ লক্ষণ ছিল না। এই মৃত্যু খুন ছাড়া আর কিছু নয়। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই দেহ দেখে এই সন্দেহের ভিত্তিতে লিখিত বক্তব্য জানানো হয়েছে। শুভব্রতের পরিবারের দাবি, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, তাঁরাই কেসের দুর্বলতা বুঝে বাইরে থেকে লোক লাগিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
বর্ধমান সিজেএম বিনোদ মাহাত ইতিমধ্যে ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চতুর্থ বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে। মৃতদেহ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল, সেখান থেকে দেহ উদ্ধার ও ময়নাতদন্ত পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে। এমনকি, দেহ সংরক্ষণের জন্য ভিসেরা স্যাম্পলও নেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক আয়েশা রানী বলেন, ঘটনার পর থেকেই সমস্ত কিছু ভিডিয়ো তোলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা উচিত নয়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝেই মৃতদেহ পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে। সেখানেই ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই ময়নাতদন্ত হয়।