বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া ঘিরে বিতর্ক চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। কোথাও কাজ না করেই বিল, কোথাও আবার টেন্ডার আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। সবমিলিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পরিস্থিতি। আর সেই বিতর্কের মধ্যেই এবার সামনে উঠে এল এক নতুন তথ্য। বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নাকি ইংরেজি পড়তে পারেন না। ফলে কর্মচারীদের ভুল বোঝানোর ফলেই টেন্ডার আটকে রয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপি। পাল্টা পঞ্চায়েতের কর্মীদের দিকেই দুর্নীতির দায় ঠেলে দিয়েছে বিজেপি। এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে পুরুলিয়া ২ নম্বর ব্লকের রাঘবপুর পঞ্চায়েত এলাকায়।
আরও পড়ুন: BJP পরিচালিত নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিক দুর্নীতি, BDO-র কাছে অভিযোগ তৃণমূলের
অভিযোগ, ঠিকাদারদের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে একাধিক টেন্ডার। এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় মহকুমা শাসক উৎপল ঘোষ আগেই প্রধানকে শোকজ করেছেন। বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার মহকুমা শাসকের সঙ্গে দেখা করে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। তবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না প্রধান দীনবন্ধু মাহাতো ও অধিকাংশ পঞ্চায়েত সদস্য।
প্রতিনিধি দলে থাকা উপ-প্রধান অমিত অধিকারী সাফ জানিয়েছেন, প্রধান ইংরেজি পড়তে পারেন না। ঠিকমতো শিক্ষিত নন বলেই নথিপত্র বুঝে ওঠা তাঁর পক্ষে কঠিন। এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন কিছু কর্মচারী। ভুল বুঝিয়ে তাঁর সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত কর্মীরাই দুর্নীতিতে জড়িত।
এই বক্তব্য সামনে আসতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঘাসফুল শিবিরের কটাক্ষ, যে প্রধান নিজে সরকারি নথি পড়ে বুঝতে পারেন না, তাঁর হাতে কীভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকে? তা হলে পিছন থেকে অন্য কেউ তো চালাবেই।
তৃণমূলের দাবি, বিজেপির প্রধান বা অন্যান্য সদস্যরাও এর সঙ্গে যুক্ত। বিজেপির যুব মোর্চাও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। তবে যুব মোর্চার এক নেতার বক্তব্য, প্রধান কোনও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন কিনা, তা দেখতেই হবে সেটা ঠিক। তবে প্রধান সহ মেম্বাররা দুর্নীতিতে জড়িত নন। কাজ না করেই বিল পেয়েছেন ঠিকাদাররা। ৮ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করছেন পঞ্চায়েত কর্মীরা। টেন্ডার আটকানোর মূল কারণ এসবই। দলকে সবই জানানো হয়েছে। পঞ্চায়েতের সচিবের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
যদিও সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েতের সচিব দেবদুলাল মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, কাউকে জোর করে বা ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর করানো হয় না। পঞ্চায়েতে এতজন নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন তাঁদের কারও মত না নিয়ে কর্মীরা চলবে কেন? এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রধান দীনবন্ধু মাহাত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রশাসনের তরফেও জানানো হয়েছে, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ লিখিতভাবে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেননি। এই ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপির।