পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এবার স্পষ্টতই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের দিকে নজর দিচ্ছে। সূত্রের খবর, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আগের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক সংখ্যালঘু প্রার্থী দিতে পারে বিজেপি।
আরও পড়ুন: হিন্দু উৎসবের দিন মিছিল ঘিরে বিতর্ক, শুভেন্দুকে তৃণমূলের কটাক্ষ ‘ভেজাল হিন্দু’
শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দলের রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন চোখে পড়ছে। বারবার জনসভা থেকে তিনি জানাচ্ছেন, ভারতীয় মুসলমানদের সঙ্গে বিজেপির কোনও বিরোধ নেই। সেই সুরেই সাম্প্রতিককালে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে নরম বার্তা দিচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। রবিবার তারাতলায় দলীয় সভায় শুভেন্দু স্পষ্ট বলেন, ভারতীয় মুসলমানরা বিজেপির শত্রু নন। ভোটার তালিকা যাচাইয়ের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় বিজেপি স্পষ্টতই উগ্র হিন্দুত্বের পথে হেঁটেছিল। শুভেন্দুর নেতৃত্বে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে খোলাখুলি অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল রাজ্য নেতৃত্বকে। এমনকি বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সেই কৌশল কার্যকর হয়নি। লোকসভায় বাংলায় বিজেপির আসন সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২-তে। সেই ব্যর্থতার পর এবার কৌশল বদলাতে বাধ্য হয়েছে দল।
রাজনৈতিক মহলের মতে, শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বিজেপি এখন হিন্দু ভোট এককাট্টা করার বদলে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ভিন্ন সমীকরণ খুঁজছে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, আগেরবার বহু মুসলমান অধ্যুষিত আসনে বিজেপি হিন্দু প্রার্থী দিয়েছিল। এবার সে ভুল করা হবে না। ৭০-৮০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট যেখানে, সেখানে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়ার দিকেই ঝুঁকছে দল।
এদিকে, বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চাও পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রমাণ করতে চাইছে, মুসলমানরা বিজেপিকে ভোট দেন না। এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি চার্লস নন্দীর দাবি, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে সাতশোরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিজেপির সংখ্যালঘু প্রার্থী লড়েছেন। জঙ্গিপুরে একশো শতাংশ মুসলমান অধ্যুষিত আসনে বিজেপি প্রার্থী চাঁদতারা বিবি জয়ী হয়েছেন। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায়ও একইভাবে রনি মণ্ডল বিজেপির হয়ে জিতেছেন। সব মিলিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে, বাংলায় মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ভাঙতে চাইছে বিজেপি। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাই সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যা এক লাফে বাড়তে পারে বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত।