আসানসোলের উষাগ্রামে এক অভিজাত হোটেলে চলছিল জাল নোট তৈরির কারবার। শুক্রবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে হানা দেয় দক্ষিণ থানার পুলিশ। অভিযান চালিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন দু’জন। ধৃতদের মধ্যে একজন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম)-এর পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি দানিশ আজিজ। অপরজন চাঁদমারি রেলপারের বাসিন্দা মহম্মদ লাল খান।
আরও পড়ুন: থরে থরে ৫০০ টাকার নোট, সবই জাল, কী কিনতে চাইত ওরা? পর্দাফাঁস করল কলকাতা পুলিশ
পুলিশ জানায়, ওই হোটেলের ঘরে ঢুকেই প্রথমে কিছু নগদ টাকা, তারপর একে একে উদ্ধার হয় জাল নোট তৈরির নানা উপকরণ। তারমধ্যে রয়েছে সাদা কাগজের স্তূপ, কিছু রাসায়নিক পদার্থ, একটি বৈদ্যুতিন আয়রন এবং একটি প্লাস্টিকের বালতি। ধৃতদের কাছ থেকে মোট দেড় লক্ষ টাকার মতো নগদ টাকাও পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণ থানার পুলিশ জানিয়েছে, তারা আগে থেকেই খবর পেয়েছিল, এই এলাকায় জাল নোট তৈরির প্রস্তুতি চলছিল। তার ভিত্তিতেই শুক্রবার রাতের অভিযান। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে, ধৃত দুই ব্যক্তি বহুদিন ধরেই এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শনিবার সকালে দুই অভিযুক্তকে তোলা হয় আসানসোল আদালতে। পুলিশ ১৪ দিনের হেফাজত চাইলেও বিচারক আপাতত পাঁচ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে ধৃতদের জেরা করে গোটা চক্রের ছক উন্মোচনের চেষ্টা করছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, এই চক্র শুধু পশ্চিম বর্ধমানেই নয়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি বাংলার নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলায় সক্রিয় ছিল। জাল নোট তৈরি করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হতো ভিনরাজ্যেও। তদন্তকারীদের অনুমান, ধৃতরা শুধু এই কারবারে যুক্ত নয়, আরও কেউ তাদের সঙ্গে যুক্ত কিন খোঁজে ইতিমধ্যেই তল্লাশি শুরু হয়েছে।
তবে ঘটনার পর থেকেই ধৃত দানিশ আজিজ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এমনকী তাঁর বাবা মহম্মদ আজিজও একাধিক সাংবাদিককে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে বদনাম করার চেষ্টা চলছে। শাসক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুলিশ তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে জোর চাপানউতোর। শাসক বিরোধী দলগুলি বিষয়টিকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে নিজেদের স্বার্থে। আর এমআইএমের স্থানীয় নেতৃত্ব বলছে, এটা পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের অপরাধে শুধু ধৃতদের বিরুদ্ধে নয়, চক্রের পেছনে থাকা মূল মাথাদের বিরুদ্ধেও তথ্য সংগ্রহ চলছে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সংস্থার সহায়তা নেওয়া হতে পারে।