রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের পরে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সরাসরি শান্তি চুক্তির উপর জোর দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্রেফ সংঘর্ষবিরতির পক্ষে নন তিনি। তারইমধ্যে সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বৈঠকে পুুতিন পুরো ডোনেৎস্ক অঞ্চল চেয়েছেন। পরবর্তীতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ট্রাম্প সেই কথা জানিয়েছেন। যদিও প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন জেলেনস্কি। আপাতত ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ আছে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। আর ডোনেৎস্ক প্রদেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ অংশ আছে রাশিয়ার দখলে। সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক চেয়েছে। লুহানস্কের প্রায় পুরো জায়গাই আপাতত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আছে। যদিও সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে।
ঠিক কী কী হল?
রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প ও মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে বলেছেন, পুতিন বলেছেন, যুদ্ধবিরতি হতে পারে না। উইটকফ বলেন, পুতিন একটি চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নতুন কোনও আগ্রাসন না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, 'রাশিয়া বড় শক্তি, আর তারা (ইউক্রেন) তা করে না। একটা সমঝোতা করতে হবে। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন যে যুদ্ধ শেষ করার জন্য সরাসরি শান্তি চুক্তি প্রয়োজন, কারণ যুদ্ধবিরতি অনেক ক্ষেত্রেই স্থায়ী হয় না।
ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি এবং পুতিন ‘জমি হস্তান্তর’ এবং ‘ইউক্রেনের জন্য সুরক্ষা গ্যারান্টি’ নিয়ে অনেকাংশে একমত হয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি ইউক্রেনের হবে এবং সম্ভবত তারা 'না' বলবে।
জেলেনস্কির অবস্থান এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তার দাবি
জেলেনস্কি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ইউক্রেন সাংবিধানিক পরিবর্তন ছাড়া কোনও অঞ্চল ছাড়বে না। তিনি ডোনেৎস্ক, স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক শহরগুলিকে রাশিয়ার সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে ‘দুর্গ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়ে 'ইতিবাচক সংকেত' পাওয়া গিয়েছে, তবে এটি কেবল 'পরবর্তী আগ্রাসনের মধ্যে বিরতি' নয়, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি হওয়া উচিত। ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিওর্গি মালোনি বলেছেন, বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর মতো একটি সম্মিলিত সুরক্ষা প্রবাহের ধারণা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্র-সহ সমস্ত অংশীদারকে যে কোনও নতুন আক্রমণে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে।
আরও পড়ুন: পুতিনের সামনে নতজানু মার্কিন সেনা! ট্রাম্পকে বললেন ‘বেঁচে আছেন দেখে ভালো লাগছে’
মস্কোর প্রতিক্রিয়া এবং পুতিনের 'কূটনৈতিক বিজয়'
পুতিন বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা অবশ্যই 'নিশ্চিত করা' উচিত এবং এই সমঝোতা 'শান্তির পথ' উন্মোচন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমr নেতারা পুতিনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখায় ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বৈঠককে মস্কোর জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক কোনও চুক্তি না হলেও ট্রাম্পের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠককে 'অগ্রগতির লক্ষণ' হিসেবে বর্ণনা করেছে রুশ গণমাধ্যম।