সাফল্য হাতে এসেও তা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার বেদনা এখন অনুভব করতে পারছেন দলিত ছাত্র অতুল কুমার। এই দলিত গরিব ছাত্রটি জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করে ছিল অনেক কষ্টে। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পড়বে বলে আসন বুক করেছিল আইআইটি ধানবাদে। কিন্তু সেই সাফল্যের আনন্দ চোখের জলে হতাশায় দুঃখে পরিণত হল ছাত্র অতুলের। কারণ এই আসনে ভর্তি হতে গেলে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা জমা করতে হতো। সেটা যে তারিখে এবং সময়ের মধ্যে করতে হতো তার থেকে কয়েক মিনিট দেরি হয়েছিল। তাই দলিত ছাত্র অতুলের সাফল্য হাতে এসেও হাতছাড়া হয়ে গেল।
ছাত্র অতুল শুধু দলিত নয়, বিপিএল তালিকাভুক্তও বটে। গোটা পরিবারই তাই। তার পরও অদম্য চেষ্টায় এবং ক্রমাগত অনুশীলনই অতুল কুমারকে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সাফল্য এনে দিয়েছিল। দু’চোখে স্বপ্ন ছিল ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু এখন তার মত, গরিবের অনেক জ্বালা। চারদিন ধরে চেষ্টা করেছিল এই টাকা জোগাড় করার। দরজায় দরজায় কড়া নেড়েছিল একদিকে টাকাটা জোগাড় করার জন্য অপর দিকে অত্যন্ত কষ্ট করে অর্জন করা আসন রক্ষা করতে। ন্যাশানাল কমিশন ফর সিডিউল কাস্ট, ঝাড়খণ্ড লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি এবং মাদ্রাজ হাইকোর্টে পর্যন্ত যায় ছাত্র অতুল। সকলের কাছে আর্জি জানায়, যাতে তার স্বপ্ন পূরণ হয় এবং পরিবারকে দারিদ্রতা থেকে মুক্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোর অনুদান নিয়ে এবার সিএজি রিপোর্ট তলব, নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট
কিন্তু কোথাও সাড়া না পেয়ে অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ছাত্র অতুল কুমার। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চের কাছে নিজের আবেদন তুলে ধরে। ১৮ বছর বয়সের ছাত্র অতুল জানায়, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা অ্যাডভানসড পাশ করেছিল দ্বিতীয় এবং শেষবারের চেষ্টায়। আদালত যদি ভর্তির জন্য নির্দেশ দেয় তাহলেই একমাত্র তার আসন সে ফিরে পেতে পারে। তবে সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির মন্তব্য আশার আলো দেখতে শুরু করেছে ছাত্র অতুল।
গোটা পরিবার মজুরি ভিত্তিক কাজ করে থাকেন। তাই ১৭ হাজার ৫০০ টাকা জোগাড় করতে একটু সময় লেগে যায়। উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর জেলার তিতোরা গ্রামে অতুল কুমারের পরিবার বসবাস করেন। বাবা রাজেন্দ্র কুমার দিনমজুর। বন্ধু ও আত্মীয় স্বজনদের সাহায্যে তাই স্কুলের পড়াশোনা করতে হয়েছে অতুলকে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সব শুনে অতুলকে বলেন, ‘আমরা তোমাকে সাহায্য করব যত দূর পর্যন্ত সম্ভব। কিন্তু শেষ তিন মাস তুমি কী করেছো? ফি দেওয়ার সময় তো শেষ হয়েছে ২৪ জুন। তখন অতুল প্রধান বিচারপতিকে জানায়, দরজায় দরজায় কড়া নেড়েছে সে। টাকা জোগাড় করলেও তা যখন জমা করতে গিয়েছে তখন ঘড়িতে ৫টা বাজে। তাই অনলাইন পোর্টালে তা করা সম্ভব হয়নি। এবার হয়তো সমাধান হতে পারে অতুলের সমস্যার।