সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ার লক্ষ্যে একের পর এক বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ভারত। ঠিক এই আবহেই এবার বড় আপডেট সামনে এসেছে। মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম বন্দরে ২ টি নীলগিরি ক্লাসের স্টিলথ ফ্রিগেট, আইএনএস উদয়গিরি এবং আইএনএস হিমগিরি ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।এই দুটি যুদ্ধজাহাজ প্রজেক্ট ১৭ আলফা (পি-১৭এ)-র অংশ যা ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে নতুন মাত্রা দিতে চলেছে।
এই যুদ্ধ জাহাজগুলির অন্তর্ভুক্তির পর, ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এর ফলে ভারতীয় নৌবাহিনী সমুদ্রে কেবল পাকিস্তানের মোকাবিলাই করবে না, বরং ভারত মহাসাগরের মধ্য দিয়ে যাওয়া গ্লোবাল শিপিং লাইন এবং ভারতীয় এনার্জি ট্রেডের রুটগুলিকেও সুরক্ষিত করবে।এর আগে এই প্রকল্পের প্রথম যুদ্ধজাহাজ আইএনএস নীলগিরি বছরের শুরুতে নৌবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নতুন দুটি ফ্রিগেট শিভালিক ক্লাসের উত্তরসূরি হিসেবে নৌবাহিনীর প্রযুক্তি, অস্ত্রপ্রণালী এবং অভিযানের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
আইএনএস উদয়গিরি
প্রজেক্ট ১৭এ স্টিলথ ফ্রিগেটের দ্বিতীয় জাহাজ এবং মুম্বাইয়ের মাজাগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (এমডিএল) দ্বারা নির্মিত, উদয়গিরি হল নৌবাহিনীর ওয়ারশিপ ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা ডিজাইন করা ১০০তম জাহাজ। পি-১৭এ জাহাজগুলিতে উন্নত স্টিলথ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং 'অত্যাধুনিক' অস্ত্র ও সেন্সর দিয়ে সজ্জিত, যা পি১৭ শ্রেণীর থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখিয়েছে। ইন্টিগ্রেটেড প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে এদের গতিবেগ ২৮ নট এবং অভিযানের সীমা ৫,৫০০ নটিক্যাল মাইল।জাহাজের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সারফেস এবং অ্যান্টি শিপ ওয়ারফেয়ারের জন্য ব্রহ্মস দিয়ে সজ্জিত। এছাড়াও, অ্যান্টি এয়ার ওয়ারফেয়ারের জন্য এয়ার ডিফেন্স গান এবং বারাক ৮ লং রেঞ্জ সারফেস টু ইয়ার মিসাইল, অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ারের জন্য বরুণাস্ত্র এবং অ্যান্টি সাবমেরিন রকেট লঞ্চার দিয়ে সজ্জিত।
আইএনএস হিমগিরি
এটি গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই) কলকাতা দ্বারা নির্মিত পি১৭এ জাহাজগুলির মধ্যে প্রথম। প্রায় ৬,৭০০ টন ওজনের পি১৭এ ফ্রিগেটগুলি তাদের পূর্বসূরী শিবালিক-শ্রেণীর ফ্রিগেটগুলির চেয়ে প্রায় পাঁচ শতাংশ বড় এবং তবুও একটি আরও স্লিম আকার ধারণ করে, যার রেডার ক্রস সেকশন কম।এই যুদ্ধজাহাজগুলিতে সুপারসনিক সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল, মাঝারি পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল, ৭৬ মিমি এমআর বন্দুক এবং ৩০ মিমি এবং ১২.৭ মিমি ক্লোজ-ইন অস্ত্র ব্যবস্থা এবং সাবমেরিন-বিধ্বংসী/জলতলীর অস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে।এই অত্যাধুনিক ফ্রিগেটটি নৌ ডিজাইন, স্টিলথ, অগ্নিশক্তি, স্বয়ংক্রিয়তা এবং টিকে থাকার ক্ষমতার এক বড় অগ্রগতির প্রতিফলন ঘটায়।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, প্রকল্প ১৭এ-এর অধীনে নির্মিত ৭ টি ফ্রিগেটের ৭৫ শতাংশ সরঞ্জাম দেশীয় কোম্পানিগুলি থেকে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এগুলির ডিজাইন এবং ইস্পাতও দেশীয়। ৬,৭০০ টন ওজনের এই ফ্রিগেট ঘণ্টায় ৩০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। প্রজেক্ট ১৭এ-র সমস্ত যুদ্ধজাহাজ শিবালিক ক্লাস ফ্রিগেটের চেয়ে ৫ শতাংশ বড়।
ক্ষমতা
এই দুটি ফ্রিগেটে ২২৫ জন নাবিক অবস্থান করতে পারে এবং দীর্ঘ দূরত্বের নজরদারি ও সাবমেরিন সনাক্তকরণের জন্য হেলিকপ্টার বহন করা সম্ভব। আগামী এক বছরের মধ্যে আরও চারটি পি১৭এ ফ্রিগেট – তারাগিরি, মহেন্দ্রগিরি, ডুনাগিরি ও বিন্ধ্যগিরি কমিশন করা হবে। এই জাহাজগুলি ভারতীয় নৌসেনার উপস্থিতি শক্তিশালী করবে এবং মালাক্কা প্রণালী থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত ভারতের সমুদ্রপ্রতিষ্ঠা দৃঢ় করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'এই দুটি ধূসর হালযুক্ত জাহাজ দেশের নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়ে দেখাবে যে ভারতীয় নৌসেনা দেশীয় নির্মাণ, দেশীয় নকশা ও দেশীয় নাবিক দ্বারা পরিচালিত এবং এটি মেক ইন ইন্ডিয়ার এক বাস্তব উদাহরণ।'